Pages

Wednesday, July 23, 2014

তার সাথে শেষ কথোপকথন...

-          :-  বিশ্বাস করো এখনো আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-          :-  হুহ, বিশ্বাস...? ভালোবাসা...? !!! তোমাকে না বলেছি এই শব্দ দুইটা যেন কখনো তোমার মুখে না শুনি...? বলেছিনা? ভুলে গেছ?
-           :-  সত্যি বলছি এখনো তোমাকে অনেক ভালোবাসি পাগল...
-           :-  খবরদার আমাকে কখনো পাগল বলে ডাকবা না। পাগল ছিলাম বলেই না আজ আমার এই অবস্থা...
-          :-  প্লিজ, আমাকে মাফ করে দাও... প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। আমি বলেছি তো আমি যা করেছি সব ভুল করেছি...

-           :-  মাফ...!!! তোমাকে...!!! অসম্ভব...!!! অন্তত আমার সাথে যা করেছ তাতে তোমাকে কখনোই মাফ করা যায় না... ইমপসিবল...!!! সরি...
-           :-  প্লিজ... তুমি আমাকে মাফ না করলে আল্লাহও আমাকে মাফ করবে না...
-          আমার কাছে মাফ না চেয়ে বরং আল্লাহ এর কাছে মাফ চাও যাতে তিনি তোমাকে মাফ করেন... আমি তোমাকে কখনো মাফ করতে না পারলেও আশা করি আল্লাহ তোমাকে মাফ করবেন। আমার চেয়ে যে আল্লাহ এর কাছে তোমার অপরাধ অনেক বেশি...


ওপাশে কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর একটু পরে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ...


-           :-  তুমি আসলেই এখন আর আমাকে ভালোবাসো না?
-           :-  এটা কমপ্লিকেটেড।
-           :-  কেন? তার মানে কি এখনো আমাকে ভালোবাসো কিন্তু আমাকে জানতে দাও না?
-           :-  আমি সেটা বলি নাই।
-           :-  তাহলে...? তুমি আমার সাথে যতই ঘৃণার অভিনয় করো না কেন, আমি জানি তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো।
-           :-  না, এটা তুমি আমাকে বলতে পারো না। ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় তেমনি এখন আমি এই ভালোবাসা জিনিসটাকে ভয় পাই, এড়িয়ে চলি...
-           :-  তুমি তোমার বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবা, তুমি আমাকে এখন আর ভালোবাসো না?
-          জানি না এটা করতে পারবো কি না, তবে এটা মনে রাখিও তোমার প্রতি এখন আমার এতোটাই ঘৃণা কাজ করে যে সেই ভালোবাসার ছিটেফোঁটাও দেখা যাবে না এই মনে...
-          কেন তুমি আমাকে এখন এতোটা ঘৃণা করো? কেন? কেন???
-           :-  আমারও তো একই প্রশ্ন, কেন এখন আমি তোমাকে এত ঘৃণা করি? তুমিই বল, কেন এখন আমি তোমাকে এত ঘৃণা করি? যেখানে কথা ছিল দুজন দুজনকে আজীবন পাগলের মতো ভালবাসবো। কিন্তু তুমিই বলতো দেখি কি থেকে কি হয়ে গেল যে আজ আমি তোমাকে ঘৃণা করি? যে আমি এক সময় তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসতাম, যা দেখে তুমি আমাকে পাগল বলে ডাকতা, সেই আমি কেন তোমাকে ঘৃণা করি? তুমিই প্রশ্ন করলা, তুমিই উত্তর দাও দেখি... কেন এমন হল? কেন??? কোন জবাব দিতে পারবা?
-           :-  আমি জানি, সব আমার দোষ, কিন্তু তুমি কি পারনা আমাকে মাফ করে আবার আগের মতো পাগলের মতো আমাকে ভালবাসতে? তুমিকি পারনা আমাকে মাফ করে দিতে?
-          না... আমি পারিনা তোমাকে মাফ করতে, আমি আর পারিনা তোমাকে সেই আগের মতো পাগলের মতো করে ভালবাসতে... আমি পারিনা... আমি এখন আর পারিনা...
-          প্লিজ...



ওপাশে আবারো ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ...


-         :-    প্লিজ তুমি আমাকে আর একটা বারের জন্য চান্স দিয়ে দেখ। আমি এর আগে যা করেছি করেছি সব ভুলে গিয়ে প্লিজ আমাকে শেষ বারের মতো আবার ভালোবাসা। প্লিজ... :’(
-           :-  দেখ, ক্ষমা মহৎ গুণ, এটা মহান মানুষদের জন্য। আমার মতো সাধারণ মানুষের জন্য না। তোমাকে আর কতবার মাফ করবো বলতো? আর কতবার তোমাকে চান্স দিব? তোমাকে মাফ করতে করতে আমি ক্লান্ত, তোমাকে চান্স দিতে দিতে আমি ক্লান্ত... এভাবে আর কত? 
-           :-  প্লিজ... এই শেষ আর না। আমি জানি আমি তোমার কাছে অনেক অপরাধী। কিন্তু শেষ বারের জন্য কি আমাকে দেখবে না?
-          :-  আর কতবার  তোমার এই “শেষ বার” দেখব বল তো...!!! I am faded up… আর নাহ...
-           :-  প্লিজ...........................
-           :-  আচ্ছা, তুমি আমার সাথে যা করেছ তার তো কোন না কোন কারন আছে, আমাকে একটা কারন বা আমার কোন একটা মাত্র দোষ দেখায়া দিতে পারবা যে তোমার এই দোষ এর কারনে আমি তোমার সাথে এরকম করেছি। পারবা আমার এরকম একটা দোষ দেখাতে?



আবারো ফোনের ওপারে ফুঁপিয়ে কান্না...


-          :-  কেঁদো না প্লিজ... তোমার ওই চোখের পানি আমি অনেক দেখেছি, অনেক সহ্য করেছি আর না... মনে আছে তোমার, একটা সময় ছিল যখন তুমি আমার কাছ থেকে কোন কিছু আদায় করার জন্য কথায় কথায় কান্নাকাটি করতা...?
-           :-  হম মনে আছে।
-           :-  মনে আছে একবার তুমি আমাকে কিছু গিফট দিছিলা, আমি নেই নাই বলে তোমার সেকি কান্না... আমার এখনো মনে আছে, তোমার কাজল দেওয়া চোখে অশ্রুর ঢল। চোখের পানি কাজলের কালিতে মেখে তোমার দুই গালে দুইটা স্রোতোধারা তৈরি করেছিল। খুব ইচ্ছে করেছিল সেদিন তোমার চোখের পানি মুছে দিতে। কিন্তু এজন্য তোমাকে স্পর্শ করতে হবে বলে নিজেকে সামলেছিলাম...



ফোনের ওই প্রান্তে আবারো কান্নার আওয়াজ। এবারে কেন যেন বেশি জোরে শোনা গেল... বেশ কিছুক্ষণ নীরব কান্না। এপাশ থেকে সব কিছু বুঝেও চুপ করে রইলো ছেলেটি। অপেক্ষা করলো মেয়েটির কান্না থামা পর্যন্ত।



-         :-    আসলে কি জানো, তোমার ওই কান্নাভেজা চোখ আমি সহ্য করতে পারতাম না। একটা সময় ছিল যখন আমি তোমার কান্নার শব্দ শুনতে পেলে আমার ভিতরটা একেবারে এলোমেলো হয়ে জেত। তোমার চোখ থেকে অশ্রু না, মনে হত আমার দুনিয়া ভেঙ্গে পরতেছে তোমার চোখের অশ্রু হয়ে... আর আজ দেখ... আমার কিছুই মনে হচ্ছে না। কিচ্ছু না... just nothing. so please stop...
-           :-  না আমার যত খুশি কাঁদবো। তোমার তাতে কি...
-           :-  তাইতো... আমার এতে কি। কাঁদ যত খুশি...


বেশকিছুক্ষন চুপ করে থেকে ছেলেটি আবার কোথা বলা শুরু করলো...


-           :-  এখনো আগের মতোই জেদ আছে দেখি...
-           :-  হ্যা। আমি এখনো আগের মতোই আছি। শুধু তুমিই আগের মতো নাই। তুমি কেন পার না আমাকে আগের মতো করে ভালবাসতে?
-           :-  না... তুমি আগের মতো নেই। হয়তো কিছু জিনিস আগের মতো আছে এখনো তোমার। কিন্তু সেই আগের তুমি এখন আর নেই... সেই আগের তুমি অনেক আগেই মারা গেছি যেদিন তুমি আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছ। সেই আগের তুমি সেদিনই মারা গেছ যেদিন তুমি আরেকজনের হাত ধরছ, সেই আগের তুমি সেদিনই মারা গেছ যেদিন তুমি আরেক জনকে ভালোবাসি বলেছ, সেই আগের তুমি সেদিনই মারা গেছ যেদিন তুমি আরেকজনকে অনুমতি দিয়েছিলা তোমাকে স্পর্শ করার... সেই তুমি এখন আমার কাছে মৃত। আমি যাকে ভালবাসতাম সেটা আজকের এই তুমি না... আমি যে মেয়েটিকে ভালবাসতাম সে অনেক আগেই মারা গেছে। মরে গেছে আমার কাছে... মৃত সে এখন... তুমি না... তুমি কে? তুমি তো শুধু মি. হাইড মতো একটা দুঃস্বপ্ন। আমি যে ডা. জেকিল কে ভালবাসতাম সে তো আর নাই। আমি হয়তো এখনো সেই আগের তোমাকে ভালোবাসি... হয়তো এখনো ভালোবাসি তাকে... কিন্তু মরে গেছে... তুমিই নিজ হাতে তাকে মেরে ফেলেছ... কেন তুমি তাকে মেরে ফেল্লা? কি করেছিলাম আমি জবাব দিতে পারো? কোন অপরাধে তুমি তাকে আমার কাছ থেকে কেরে নিলা? জবাব দিতে পারবা...??? কেন? why?????????? হ্যা, আমি এখনো সেই আগের তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তোমাকে না, বর্তমানের তোমাকে না। এই বর্তমানের তোমার জন্য শুধুই ঘৃণা। ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই তুমি আমার কাছ থেকে আশা করতে পার না এখন... আর তুমি ভালো করেই জানো সেটা...

একটানা কথা গুলো বলে ছেলেটি হাঁপিয়ে উঠে। নিঃশ্বাস ধরে যায় তার। হাঁসফাঁস করতে থাকে। মনে পরে ডাক্তার বলেছিল কখনোই বেশি উত্তেজিত না হতে। অনেক দিনের জমানো সকল কথা বলতে পেরে ভালো লাগতেছে। কিন্তু কেন জানি নিঃশ্বাস বন্ধ বন্ধ হয়ে আসতেছে তার। মনে পরে গেল ডাক্তার এর কথা। মানি ব্যাগ খুজে বের করার চেষ্টা করলো... কিন্তু পেল না। মনে পরে গেল মানি ব্যাগ আছে প্যান্ট এর পকেট এ, আর প্যান্ট আছে হ্যাঙ্গার এ ঝুলানো। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো ছেলেটি, কিন্তু দাঁড়ানো তো দুরের কথা উঠে বসতেই পারলো না, তার আগেই ধপ করে বিছানায় পরে গেল। হাতে ঠেস দিয়ে বসতে গিয়ে খেয়াল করলো তার বাম হাত টা কেন জানি ঝিম ঝিম করতেছে, খুব ধীরে ধীরে কাঁধের পিছন দিকে একটা চিনচিনে ব্যথা ছড়িয়ে পরতেছে।
এই ঘটনাগুলোর সাথে বেশ পরিচয় আছে তার। জানে এরপরে একটা পিনপিনে ব্যথা ছড়িয়ে পরবে বুকের বাম দিকে। এর পরে সেই ব্যথার বিস্তৃতি ঘটতে থাকবে। একসময় খুব কষ্ট হতে থাকবে। মনে হবে এর চেয়ে মনে হয় মৃত্যুই ভালো। এরকম বেশ কিছুক্ষণ ধরে ব্যথা বাড়তে বাড়তে একসময় আর ব্যথা আছে বলে মনেই হবে না, সে সময় মনে হবে সে শুন্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। তারপর আর তার কিছুই মনে থাকবে না...
   না, আজকে এরকম হতে দেওয়া যাবে না। তাকে বাঁচতে হবে। খুজে বের করতে হবে ট্যাবলেটগুলো।
মাথার উপরে পিসির টেবিল হাতড়ালও, কিন্তু না ট্যাবলেটগুলো পেল না।  প্রয়োজনের সময় সব সময়েই এরকম হয় ছেলেটির। আগে এরকম হত না, মেয়েটি তার সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করার পর থেকে তার আজ এই অবস্থা। হঠাত করেই মেয়েটির কথা মনে পরে গেল তার... নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারলো না। এরকম অবস্থায় কেন...?
অবশেষে খুজে পেল ট্যাবলেট এর পাতা। পানি ছাড়াই মুখে নিয়ে নিল একটি। শুয়ে পড়লো বিছানায়। ফোনে হাত ঠেকতেই মনে হল মেয়েটি এখনো মনে হয় ফোন লাইনেই আছে মনে হয়... ফোনটা নিয়ে কানে ঠেকাল।





-           :-  হ্যালো...
-           :-  কি করতেছিলা? আমি সেই কখন থেকে কথা বলে যাচ্ছি, আর তোমার কোন টু শব্দও নাই যে...
-           :-  কিছু না। একটু ঘুমিয়ে পরেছিলাম।




অকপটেই মিথ্যা বলল ছেলেটি। জানতে দিতে চায়না মেয়েটিকে তার অসুস্থতার কথা... কি দরকার? এখন আর এসবের কোন মানে আছে নাকি? মায়া বাড়িয়ে কি লাভ...!!!




-           :-  আমার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পরেছিলে!!!
-           :-  হ্যা। তাতে সমস্যা কি?  আর তোমাকে তো আমার বলার মতো কিছু নাই। সবই তো তোমাকে বলে দিছি আমি। তোমাকে বলার মতো কিছুই নেই আর। আমার মুখ তো তুমি বন্ধ করে দিছ সেই কবেই...
-           :-  আমাকে কিছুই বলার নাই তোমার?
-           :-  নাহ। সব বলে দিছি।  কিছু বলার নাই এখন আর।
-           :-  প্লিজ... আমাকে মাফ করে দাও। আমাকে শেষবারের মতো সুযোগ দাও। আমি এখনো তোমাকে ভালোবাসি...
-           :-  মনে হয়না আমার পক্ষে সেটা সম্ভব। হয়তো তুমি এখন আমাকে আবার ভালোবাসো সেই আগের মতো, কিন্তু কিভাবে আমাদের দুজনের মাঝে তুমি তৃতীয় একজনকে আনতে পারলে বলতে পারো? কেন বলতে পারো? আমাকে যদি এতোই ভালবেসে থাকো তুমি তবে কেমন করে দ্বিতীয় আরেকজনকে ভালবাসতে পারলে? এতোটা নিখুত অভিনয় আমার সাথে কেমন করে করলে তুমি যে আমি এটা টের পর্যন্ত পেলাম না...!!! ভেবে অবাক হই কিভাবে তুমি তোমার নিখুত অভিনয় দিয়ে ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে তুমি আমাকে ফাকি দিয়েছ। আমি তোমাকে একটুও চিনতে পারিনি... একটুও না... যে তোমাকে আমি এতোটা ভালবাসতাম আর বিশ্বাস করতাম সেই তুমি কিভাবে এটা করলে পারলা আমার সাথে...!!! আমি এখনো ভেবে কোন কুল কিনারা পাই না... কিভাবে পারলা তুমি...!!! চিন্তা করলেই মাথামুথা নষ্ট হয়ে যায় আমার জানো? কিভাবে পারলে তুমি...!!! আমি কল্পনাও করতে পারি না। যখনি চিন্তা করি তখনই বারবার মনে হয় আমি মনে হয় খুব খারাপ কোন একটা দুঃস্বপ্ন দেখতেছি যেটা অনেক লম্বা। একসময় এটার শেষ হবে, আমার ঘুম ভাঙবে, ঘুম থেকে উঠেই তোমাকে ফোন করে ঘুম ভাঙ্গাবো, তুমি ঘুমঘুম জড়ানো কণ্ঠে আমাকে বলবে, “এত সকালে কি মনে করে পাগল? ‘আই লাভ ইউ’ বলার জন্য ফোন করলা নাকি? যাও ঘুম ভাঙানোর অপরাধে ১০ বার আমাকে ‘আই লাভ ইউ’ বল এখন...” তখন আমি তোমাকে তোমার ফরমায়েশ মতো ১০ বার ‘আই লাভ ইউ’ বলতে থাকবো আর তুমি গুন্তে থাকবে, ‘আই লেবু’ বলে ফেললে ধমক দিবে...!!! কিন্তু না... আমার এই দুঃস্বপ্ন আর কখনোই শেষ হবে না... এটাই এখন আমার বাস্তবতা। আর এর জন্য তুমি দায়ী। তুমি...!!! তুমিই...!!!



আবার কান্নার শব্দ। এবারে একেবারে ডুকরে ডুকরে কান্না... অতীতের কিছু সুখস্মৃতি মেয়েটিকে এখন কুরেকুরে খাচ্ছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে মেয়েটি... এখন সে বুঝতে পারতেছে সে কত বড় একটা ভুল করেছে জীবনে। আর এ এমন এক ভুল যা আজীবনেও আর শোধরান যাবে না। সে নিজেও ভেবে কুল কিনারা করতে পারতেছে না সে কিভাবে এই পাগল ছেলেটির সাথে এত বড় প্রতারণা করতে পারলো...!!! নিজেই নিজেকে কতবার জিজ্ঞেস করেছে... নিজেই উত্তর পায়নি খুজে, ছেলেটির প্রস্নের কি জবাব দিবে সে... তার এখন কান্না ছাড়া আর কিই বা করার আছে...
   সে জানে ছেলেটি একবার না, তাকে কয়েকবার সুযোগ দিয়েছিল ফিরে আসার জন্য। কিন্তু সে প্রতিবারই ফিরেছি বলে মিথ্যা কথা বলতো... সে নিজেও এখন আর ভেবে পায়না কি মনে করে সে এটা করেছিল... কি জবাব দিবে সে ছেলেটিকে? তাকে তো বলার মতো কিছু তার নাই। মাফ চাওয়া ছাড়া সে আর কিই বা করতে পারে? সে ছেলেটিকে হারিয়ে ফেলতেছে, চির জীবনের জন্য তাকে হারিয়ে ফেলতেছে সে। কিছুই করার নাই এখন তার। সব কিছুই তার নাগালের বাইরে...
   কিভাবে পারলো সে নিজের সাথে এরকম প্রতারণা করার? মনে হচ্ছে সে ছেলেটির সাথে না, আসলে নিজের সাথেই প্রতারণা করেছে। এজন্য নিজের প্রতি খুব রাগ হয়, মাঝে মাঝে মনে হয় মরেই যাই। খুব কান্না পাচ্ছে তার। অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে তার কান্নার শব্দ ছেলেটির কানে না যায়, কিন্তু  নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারতেছে না।



-           :-  আমাকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিও না প্লিজ।
-           :-  আমি তোমাকে কিভাবে দূরে সরিয়ে দিলাম বলতো? তুমি নিজেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখছ। আমিই বরং তোমাকে বারবার কাছে টেনে নিয়েছি। কিন্তু তুমি কি করেছে মনে পরে তোমার?
-           :-  আর একটিবার কি পারনা আমাকে আগের মতো করে কাছে টেনে নিতে? প্লিজ...
-          আর কত? অনেক হয়েছে... আসলে আমি তোমাকে হারাইনি, তুমি নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলছ।  মনে হয় আমি আসলে তোমার যোগ্য ছিলাম না, তুমি এখন তোমার যোগ্য মানুষের কাছে ফিরে গেছ। আমি এখন মুক্ত...
-           :-  না... তুমি এভাবে আমাকে ফেলে রেখে যেতে পারো না।
-          :-  আসলেই... আমি তোমাকে এভাবে ফেলে রেখে যেতে পারি না। তুমি নিজেই নিজেকে ফেলে দিয়েছ আস্তাকুরে। আমি বারবার তোমাকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছি। তুমিই বরং হাত বাড়িয়ে দাওনি, দিলেও আবার সাথে সাথে সরিয়ে নিয়েছ...  শোনো, আর কথা বলতে ভাল্লাগতেছেনা , ঘুম পাচ্ছে খুব। রাখি এখন... আর কথা বলতে ইচ্ছে করতেছে না।
-          এখনি রাখবা...? আর কবে কথা বলবা আমার সাথে...?
-          :-  হম, এখনি রাখবো। আর কবে কথা বলবো জানি না। বেচে থাকি নাকি মরেই যাই সেটাই জানি না আর কথা... হয়তোবা এটাই আমাদের শেষ কথা হবে। এই জীবনে আর কথা নাও হতে পারে। রাখি এখন...
-           :-  সত্যি আমার সাথে কখনো আর কথা বলবা না? প্লিজ এই কাজটা অন্তত করিও না। ঘৃণা করো আর যাই করো প্লিজ আমার সাথে কথা বলা একেবারে বন্ধ করে দিও না। ২/৩ মাসে অন্তত একবার করে হলেও আমার সাথে কথা বলবা প্রমিজ করো প্লিজ...
-          কিভাবে আমি এই প্রমিজ করি বল? যেখানে দুই তিন মাস বেচে থাকি কিনা সেটাই সিওর না, সেখানে আবার কথা বলা... তাও আবার তোমার সাথে...!!! হয়তোবা আর কখনোই তোমার সাথে কথা হবে না, দেখাও না হতেই পারে। আর আমার মনে হয় আমাদের দুজনের জন্যই সেটা ভালো। এখন যার কাছে আছো তার সাথেই থেকে যেও বাকি জীবনটা। তাকে আবার আমার মতো করে ধোঁকা দিও না। আল্লাহ এক ভুল দুইবার সহ্য নাও করতে পারেন। আর আমার কাছে মাফ চেয়ে লাভ নাই। তুমি আমার সাথে যা করেছ তাতে আমি তোমাকে কখনোই মাফ করতে পারব না। একটা জিনিস মনে রেখ, তুমি যতটা দিন বাঁচবে, শুধু মনে রেখ কোন একটা মানুষের ঘৃণা নিয়ে তুমি বেচে থাকবে। সেই মানুষটার ঘৃণা যে একটা সময় তোমাকে সবচেয়ে বেশি করে ভালোবাসতো। সেই মানুষটা, আর এটাও মনে রাখিও সেই মানুষটা তোমাকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবা। তুমি যদি নিজে একটু চিন্তা করে দেখ তুমি নিজেও তোমাকে ক্ষমা করতে পারবা না। সেই ছেলেটি তোমাকে হারায় নাই, তুমি নিজেই তাকে হারিয়েছ। তুমি তাকে কখনোই কোন কারনেই ব্লেম করতে পারবা না, কিন্তু সেই ছেলেটি চাইলেই তোমাকে সব কিছু নিয়ে ব্লেম করতে পারবে... মাফ করে দিও আমাকে। জানি তোমার কাছে আমার অনেক ছোটোখাটো অভিযোগ ছিল, তোমার অনেক দাবী ছিল হয়তো। আর সেগুলো আমি ফুলফিল করতে পারি নাই বলেই না তুমি আমাকে ছেড়ে গেছ। আমারই দোষ। পারলে মাফ করে দিও। তবে মনে রেখ আমি তোমাকে কখনোই মাফ করবো না।
-          :-  প্লিজ তুমি আমার সাথে মাঝে মাঝে কথা বলিও... নইলে আমি মরে যাবো।
-           :-  ফিজিক্যালি ইম্পসিবল। আর আজকেই শেষ কথা... প্লিজ এখন রাখো ফোন। অনেক ঘুম পাচ্ছে।



মেয়েটি বুঝতে পারতেছে সে আসলেই ছেলেটিকে আজিবনের জন্য হারিয়ে ফেলতেছে... আর কোন আশাই দেখতেছেনা সে। কান্না ছাড়া কিছুই বলার নাই তার। কি বলে ছেলেটিকে ফেরাবে সে...? কি বলবে সে...!!! এবারে আর কান্না আটকানোর চেষ্টা করলো না সে। ঝরঝর করে উচ্চ শব্দে কেঁদে ফেলল সে।  ইচ্ছে করলো তার কেঁদে কেঁদে গলাই একেবারে ছিরে ফেলতে... বেচে থেকে আর কি লাভ তার...



-           :-  শেষ একটা অনুরোধ রাখবা আমার?
-           :-  আগে তো আমাকে অনুরোধ করা লাগতো না, তুমি চাইলেই হত... কিন্তু না , এখন আমি তোমার অনুরোধও রাখতে পারবা না...
-           :-  প্লিজ... লাস্ট রিকুয়েস্ট... প্লিজ বলো রাখবা...
-           :-  বলে দেখতে পারো। জানি না রাখবো কিনা...
-           :-  যদি আজকেই আমাদের শেষ কথা হয়, তবে তুমিকি শেষ বারের মতো ‘আই লাভ ইউ’ বলবা? জাস্ট একটা বার...? ‘আই লেবু’ বললেও হবে... প্লিজ... জানি তুমি কখনো আমাকে মাফ করবা না, আল্লাহও কখনো মাফ করবে না। তোমার কাছে শুধু এইটুকু চাই আমি। প্লিজ... তোমার মুখ থেকে একটা বার আমি ‘ভালোবাসি’  শুনতে চাই। শত ঘৃণা করলেও, একটু কষ্ট করে বলবা প্লিজ... প্লিজ... একটাবার ভালোবাসি বল...




প্রায় ১০ মিনিটের মতো মেয়েটি কেঁদেই চলল। তার উপরে এখন দুনিয়াটাই মনে হয় ভেঙ্গে পরতেছে। সে জানে ছেলেটি তাকে আর কখনোই এই ‘আই লাভ ইউ’ বলবে না, সে আর কখনোই ছেলেটির কাছ থেকে ফাঁকিবাজি স্বরূপ ‘আই লেবু’ শুনতে পারবে না... চিন্তা করেই হুহু করে কেঁদে ফেলল আবার।


-           :-  আই লাভ...


ফোন লাইন টা কেটে গেল এই অবস্থায়। ব্যালেন্স শেষ হয়ে গেছে... তার শোনা হল না কথাটা... 


এপারে ছেলেটির অবস্থাও সেরকম। দুচোখের অশ্রুজলে একাকার সে। বালিশও ভিজে একাকার... অনেক দিন পরে মেয়েটির জন্য কাঁদল সে। একটা সময় ছিল যখন সে হলের ছাদে উঠে হাহাকার করে ডুকরে ডুকরে কেঁদে উঠত। কিন্তু একটা সময় পরে নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। আজ প্রায় দুই বছর পরে আবার মেয়েটির জন্য কাঁদল। ফোন কেটে যাওয়ার পরে সে তার অসমাপ্ত কথা শেষ করলো।


“...আই লাভ ইউ পাগলি... এখনো তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি শুধু তোমাকে মেনে নিতে পারিনা। তুমি যা করেছ সেই ছেলের সাথে তা আমি কোন মতেই মেনে নিতে পারি না। কখনোই মেনে নিতে পারবো না। কেউ মেনে নিতে পারবে না। ভালো থেকো সব সময়।”




ফোনটা রেখে  এরপরে ছেলেটি হুহু করে কেঁদে ফেলল। অনেক কষ্টে মেয়েটির সামনে নিজেকে শক্ত করে রেখেছিল। আর পারলো না সে। বাঁধভাঙ্গা পানির মতো অশ্রুধারা নেমে এল চোখে। পাশ বালিশটা বুকে চেপে ধরে বিছানা শুদ্ধ কান্নার দমকে কাঁপতে লাগলো সে...





পরবর্তী দিনের ঘটনাঃ ছেলেটি তার সকল সিম  চেঞ্জ করে ফেলল। মনে মনে বলল, “বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দুরেও ঠেলে দেয়...”




লেখকের স্বীকারোক্তিঃ কিছুদিন আগে একটা কাল্পনিক ফেসবুক স্ট্যাটাস দিছিলাম এরকম করে,
“- বিশ্বাস করো এখনো আমি তোমাকে ভালোবাসি।
- হুহ, বিশ্বাস...? ভালোবাসা...? !!! তোমাকে না বলেছি এই শব্দ দুইটা যেন কখনো তোমার মুখে না শুনি...? বলেছিনা? ভুলে গেছ?
- সত্যি বলছি এখনো তোমাকে অনেক ভালোবাসি পাগল...
- খবরদার আমাকে কখনো পাগল বলে ডাকবা না। পাগল ছিলাম বলেই না আজ আমার এই অবস্থা...
- প্লিজ, আমাকে মাফ করে দাও... প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও। আমি বলেছি তো আমি যা করেছি সব ভুল করেছি...
- মাফ...!!! তোমাকে...!!! অসম্ভব...!!! অন্তত আমার সাথে যা করেছ তাতে তোমাকে কখনোই মাফ করা যায় না... ইমপসিবল...!!! সরি...
- প্লিজ... তুমি আমাকে মাফ না করলে আল্লাহও আমাকে মাফ করবে না...
- আমার কাছে মাফ না চেয়ে বরং আল্লাহ এর কাছে মাফ চাও যাতে তিনি তোমাকে মাফ করেন... আমি তোমাকে কখনো মাফ করতে না পারলেও আশা করি আল্লাহ তোমাকে মাফ করবেন। আমার চেয়ে যে আল্লাহ এর কাছে তোমার অপরাধ অনেক বেশি...
ওপাশে কিছুক্ষণ নীরবতা, তারপর একটু পরে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ...
___________________________________________________________
এই অবস্থায় ছেলেটি মেয়েটির ফোনকলটি কেটে দিল। আবার সময় এসেছে তার নাম্বার চেঞ্জ করার...”


তখন অনেকেই ইনবক্স এ প্রশ্ন করেছিল ঘটনা সত্য কিনা। কিছু বলি নাই... বসে বসে নিজের কাল্পনার মাধুরী মিশিয়ে লিখে ফেললাম এই অখাদ্য জিনিসটা। নিজেই অবাক হইছি এত বড় লেখা দেখে। কেউ পরিয়েন না প্লিজ... :D



যাইহোক আগেই বলে রাখি, এই কথোপকথন এর সাথে কেউ যদি আপনার আশেপাশের কারও জীবনে ঘটে জাওয়া কোন ঘটনার মিল খুজে পান তবে তার জন্য লেখক সম্পূর্ণরূপে দায়ী থাকবে। :D :D  কারন এই কথোপকথনটা আসলে “জীবন থেকে নেওয়া...”

সব সময় নিজে ভালো থাকেন, আশেপাশের মানুষদেরকে ভালো রাখেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, কখনোই অন্যের বিশ্বাস এর অমর্যাদা করবেন না প্লিজ। রিকুয়েস্ট করে গেলাম...


Thanks...

====> Always feel free to SHARE so that your friends can can know these informations.
Keep visiting this blog site for more.
Don’t forget to vote for this blog and also feel free to rate the posts.
U also can submit your email to SUBSCRIBE this blog.
Thanks again. :)




No comments:

Post a Comment