_________________________________________________________________________________
অবশেষে পশ্চিমাদের চাপের মুখে তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে রাজি হয়েছে সরকার। তবে এই রাজি হওয়া ‘কান মলা খেয়ে শর্ত মানা’র শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও শ্রমিক নেতারা।
অবশেষে পশ্চিমাদের চাপের মুখে তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে রাজি হয়েছে সরকার। তবে এই রাজি হওয়া ‘কান মলা খেয়ে শর্ত মানা’র শামিল বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও শ্রমিক নেতারা।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি
(জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স) বাতিলের
বিষয়টি সরকারের কুটনৈতিক অনভিজ্ঞতা
ও একগুঁয়েমির কারণে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জিএসপি
টিকিয়ে রাখতে জোরালো পদক্ষেপ নিতে বেশ কিছু ইঙ্গিত দিলেও সেদিকে সরকার তোয়াক্কা
করেনি বলে অভিযোগ বিশ্লেষকদের।
তাদের মতে, বাংলাদেশের পোশাক
শিল্পের অন্যতম বৃহৎ বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) জিএসপি টিকিয়ে রাখতে যেসব শর্ত
মানতে হবে হঠাৎ করে সেসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া সরকারকে জন্য বেশ কঠিন হবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের তৈরি
পোশাক খাতে কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে তিন বিষয়ে অগ্রগতির
সময়সীমা বেধে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ৮ জুলাই জেনেভায় ইইউ আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের
এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
ডিসেম্বরের মধ্যে কারখানা
পরিদর্শকের সংখ্যা দুইশ’তে উন্নীত করা, আগামী বছরের জুনের মধ্যে সব
কারখানার কাঠামো ও নিরাপত্তাব্যবস্থার পরিদর্শন শেষ করা ও চলতি অধিবেশনে শ্রম আইন
সংশোধনের মত বিশেষ কিছু বিষয় পালনে শর্ত বেধে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার ইচ্ছা করলে
বহু আগেই এসব বিষয়ে স্পষ্ট সমাধান করতে পারত। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
বাংলাদেশের একজন সাবেক রাষ্ট্রদূত জানান, যে শর্তগুলো মানার জন্য ইউরোপীয়ান
ইউনিয়ন চাপ দিয়েছে সেগুলো তাদের জন্য নয়, বরং শ্রমিকদের জন্যই অত্যন্ত
দরকারি। কিন্তু সরকার নিজে সেসব না করে এখন অন্যের চাপে তা করতে বাধ্য হচ্ছে।
বিষয়টি খানিকটা ‘কান মলা খেয়ে শর্ত মানা’র মত অবস্থা।
তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় বহু বছর
ধরে আলোচিত হলেও রাজনৈতিক কারণে সরকার এসব কাজ করেনি। আর এখন ইউরোপ-আমেরিকাতে
শুধু তাদের সরকার বা ক্রেতা সংগঠন নয়, ভোক্তারাও শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে
দাঁড়িয়ে গেছে। সুতরাং শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা বাংলাদেশ সরকারকে করতেই হবে।
এখনি শতভাগ করতে না পারলেও পদক্ষেপগুলো নিতে হবে।’
বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সরকারের
পাশাপাশি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’কেও দায়ী করেন সাবেক এই কুটনীতিক।
তিনি বলেন, ‘সরকার ও বিজিএমই
শ্রমিকদের বিরুদ্ধে একই ভূমিকা পালন করে আসছে। বিজিএমই এ টাকা দেয়, আর সব সরকার তাদের
হয়ে পলিসি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। বিদেশিদের চাপ খাওয়ার আগে আত্মসম্মান নিয়ে এসব কাজ
সরকারের করা উচিত ছিল।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক
সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমেরিকা বিভিন্ন
সময়ে বাংলাদেশকে শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাপ দিয়ে এসেছে। কিন্তু বিষয়টি
বোঝার ক্ষমতা সরকারের কুটনীতিকদের ছিল না। হিলারি ক্লিনটন যখন শ্রমিক নেতা
আমিনুলের নাম ধরে এ সেক্টরের অসঙ্গতি তুলে ধরেন, তখন বুঝতে হবে
তারা বাংলাদেশকে নিয়ে যথেষ্ট হোমওয়ার্ক করেই এসব কথা বলছে।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশি
কুটনীতিকদের কথা বুঝতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। আর এর কারণ হিসেবে অনভিজ্ঞতাই দায়ী।
অবিচল মালিকপক্ষের পাশে থাকা, পদ্মা সেতু দুর্নীতি, গ্রামীণ ব্যাংকসহ
নানা বিষয়ে সরকারের একগুঁয়েমি প্রকাশও এসবের জন্য কিছুটা দায়ী বলে মন্তব্য করেন
অধ্যাপক ইমতিয়াজ। ইমতিয়াজ বলেন, আমেরিকার বাজারের জিএসপি সুবিধা হারিয়ে
ইইউয়ের চাপে যেকোনো শর্তে রাজি হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বাংলাদেশের।
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের দক্ষতা
থাকলে এসব সমস্যা আরো আগেই সমাধান করা যেত। স্পেকট্রাম ধস, আমিনুল হত্যা, তাজরীনের
অগ্নিকাণ্ড, রানা প্লাজা ধস এসব এক দিনের ঘটনা নয়। এত কিছুর পরেও
সরকার কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি।
এমনকি মালিকদের সংগঠন বিজিএমই-র
অবৈধ বিল্ডিং ভাঙতে পারেনি সরকার। এটি ভেঙে তাদেরকে সঠিক পথে চলার নির্দেশ দিলেও
হয়ত এতদিনে বিদেশে একটি বার্তা যেত। সেটিও করতে পারেনি সরকার।’
এসব শর্ত মানার পরেও যুক্তরাষ্ট্রের
জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া সহজ হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেসব শর্ত ইইউ
দিয়েছে সেগুলো এত অল্প সময়ে মানা সহজ না। কিন্তু আবার ‘না’ করারও সুযোগ নেই।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন সন্তুষ্ট হলে যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে পুনরায় ভাবতে
পারে। তবে সে পর্যন্ত যাওয়া অনেক কঠিন হবে।’
এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউট অব লেবার
স্টাডিজের (বিলস) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান আহমেদ বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে
শর্তগুলো পূরণ করার কথা সেসব দাবি আমরা অনেক আগে থেকেই করে আসছি। কিন্তু সরকারের
উদাসীনতার কারণে আমাদের কোনো দাবিই পূরণ হয়নি। এর জন্য মালিক পক্ষ কোনো অংশে কম
দায়ী না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের শ্রমিকদের দীর্ঘদিন আইনের অধিকার থেকে বঞ্চিত
রাখা হয়েছে, মানবিক সুবিধা বঞ্চিত করা হয়েছে। এর ফলে আজ এই
পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’ সুলতান আহমেদ বলেন, ‘এখনই সব সমস্যার সমাধান করা সরকারের
জন্য কঠিন হবে। তবে এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। আর সে উদ্যোগটিই দেখতে চায়
ইইউসহ অন্য ক্রেতা সংগঠনগুলো।’
Thanks...
====> Always feel free to SHARE so that your friends can can know these
informations.
<> ♦♣♠ ♠♣♦ <>
Don’t forget to vote for this blog and
also feel free to rate the posts.
Thanks again. :)
__________________________-___________________________
No comments:
Post a Comment