পিকে (২০১৪) ও থ্রি ইডিয়টস (২০০৯) ছবির জন্য আলোচিত
রাজকুমার হিরানি। হিরানি পরিচালিত অন্য দুটি চলচ্চিত্র মুন্নাভাই এমবিবিএস (২০০৩)
ও লাগে রাহো মুন্না ভাই (২০০৬)। তাঁর জন্ম ১৯৬২ সালের ২০ নভেম্বর ভারতের নাগপুরে।
ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলেও তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন
চলচ্চিত্রকে।
আপনার জীবনাদর্শ কী? জীবনে বহুবার আমি এ
প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি। কখনোই প্রকৃত উত্তর খুঁজে পাইনি। আমরা আসলে কেউই জানি
না আমরা কেন এই ধরাধামে এসেছি। মানুষ বাঁচে কত দিন? বড়জোর
ষাট, সত্তর কিংবা আশি বছর?
প্রতিদিন
সকালে ঘুম ভাঙার পর আপনি যদি মনে করেন জীবনটা খুবই সংক্ষিপ্ত, তাহলে দেখবেন, জীবনটাকে আপনি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ
থেকে দেখতে পারছেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা
প্রায় সবাই মনে করি, আমাদের হাতে প্রচুর সময় রয়েছে,
জীবনের আয়ু সংক্ষিপ্ত নয়।
তাই আমি মনে করি, আমাদের প্রতি
মুহূর্তে মনে করা উচিত, এ পৃথিবীতে আমাদের সময় খুব,
খুব সামান্য। আজ থেকে ৫০ অথবা ৭৫ বছর পর কেউ হয়তো আমাকে আর
চিনবে না। তো এসব চিন্তা করে ঘুম নষ্ট করার দরকার কী! এসব নিয়ে আমি মোটেও মাথা
ঘামাই না। আমাদের প্রয়োজন টাকা, আমাদের প্রয়োজন সম্পদ,
কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, এসব অর্জনেরও
একটা সীমা আছে। আমি মনে করি, মানুষের জীবনে সত্যিকার
অর্থে দুটি সমস্যা আছে—এক. স্বাস্থ্য ও দুই. দারিদ্র্য।
আপনি দেখবেন, যারা জ্যোতিষীর কাছে
যায়, তারা জানতে চায় তাদের টাকাপয়সা কিংবা সম্পদ হবে
কি না, তাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে কি না ইত্যাদি। কারণ
জীবনের শেষ বেলায় এক সকালে উঠে আপনার মনে হবে, আপনার
দেখভাল করার মতো কেউ আছে কি না। আর তখনই আপনার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে।
আমি মনে করি, আমি সব সময় ও রকমটাই
ভাবি। এটা কিছুটা বংশগত ব্যাপারও বটে। আমি সৌভাগ্যবশত এমন এক পরিবারে জন্মেছি যে
পরিবারটা খুব একটা ধনী ছিল না। তবে বাবা চিন্তা-চেতনায় ছিলেন যথেষ্ট আধুনিক।
একবার আমাকে খুব ভয় দেখানো হলো। নিয়মিত স্বাস্থ্য
পরীক্ষা করাতে গিয়ে জানলাম, শরীরের কোনো একটা অংশ ঠিকঠাকমতো
কাজ করছে না। চিকিৎসক বললেন, পরিবারের কাছে ফিরে যান,
আপনি খুব শিগগিরই জটিল রোগে আক্রান্ত হবেন। চাপের মধ্যে ভালো কাজ
করা মানে অনেকটা সংগ্রাম করার মতো। আমি সব সময় চেষ্টা করি এই ‘মানসিক চাপ’
বিষয়টাকে পাত্তা না দিতে।
বিলিয়ার্ড খেলোয়াড় গীত সিতাই একবার আমাকে বলেছিলেন, তিনি একবার থাইল্যান্ডে ফাইনাল খেলা খেলছিলেন। তাঁর প্রতিপক্ষের নাম
ছিল সম্ভবত ওয়াত্তানা। এই খেলোয়াড় প্রচুর পয়েন্ট নিয়ে ফাইনালে উঠেছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ করেই একটা খেলায় হেরে গেলেন এবং তারপর একের পর এক হারতে লাগলেন।
স্বাভাবিকভাবেই গীত তখন খুব অবাক হয়েছিলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ব্যাপার কী? উত্তরে ওয়াত্তানা বলেছিলেন,
আমি মনে করি, আমি সেই খেলায় অবশ্যই জিততাম।
কিন্তু আমার সম্পূর্ণ মনোযোগ ছিল পুরস্কারের টাকার দিকে। আমি ভাবছিলাম, পুরস্কারের টাকা পেলে আমার বাবার জন্য একটা বাড়ি কিনব। এই ভাবনা আমাকে
কিছুটা বিভ্রান্ত করেছিল। আমি তখন কিছুটা নার্ভাস বোধ করছিলাম। কিছুতেই খেলায়
মনঃসংযোগ করতে পারছিলাম না এবং যার ফলে আমার প্রতিপক্ষ খেলাটায় জিতেছিল।
গীতের এই গল্প থেকে আমি শিখেছিলাম, আপনি কী করছেন, তার লক্ষ্য ঠিক রাখা খুবই
জরুরি।
আমি সম্প্রতি ক্রিস্টোফার নোলানের একটি সাক্ষাৎকার
পড়েছিলাম। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তিনি কোনো মুঠোফোন
ব্যবহার করেন না। এমনকি তাঁর কোনো ই-মেইল আইডিও নেই। প্রতিদিন আপনি নাছোড় বান্দার
মতো অন্তত ২০ হাজার মানুষের মনোযোগ চান। কিছু মানুষ এ বিষয়টিকে উপভোগ করতে পারে,
তবে কিছু মানুষ মনে করে এটা এক ধরনের চিত্তবিনোদন। তো এ কথা
বললাম এ জন্য যে আমাকে বিরক্ত করার কেউ নেই, না ফোন,
না কোনো মানুষ। কিন্তু যখন আপনি একটু একটু করে পরিচিত হয়ে উঠবেন,
তখন অনেক কিছুই আপনার পিছু লাগবে। জগতে চিত্তবিনোদনের অনেক
উপাদান আছে। আপনাকে কর্মে সফল হতে হলে ওই সব থেকে অবশ্যই নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
প্রত্যেকের বোঝা উচিত, ‘প্রয়োজন’ ও ‘লোভের’
মধ্যে পার্থক্য কী। আপনার জানা উচিত, ঠিক কোন জায়গাতে
আপনাকে থামতে হবে এবং এটাও জানা উচিত, ‘আর নয়, বহুত হয়েছে’ কথাটা কখন বলতে হবে। অনিশ্চয়তা আপনাকে খতম করে দিচ্ছে?
পৃথিবীর সবেচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তির দিকে তাকান, তিনিও বলবেন, ভয় লাগে, কখন সব শেষ হয়ে যায়! আপনি যদি এই অনিশ্চয়তার ভয় কাটাতে পারেন,
তবে সেটাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
অনেকেই আপনাকে খারাপ মানুষ মনে করতে পারে। কিন্তু আপনি
নিজেকে কখনোই খারাপ মনে করেন না। এটা মানুষের স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। এ বিষয়টি
প্রথম মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল বোমান ইরানি, যখন আমরা একসঙ্গে
মুন্না ভাই এমবিবিএস বানাচ্ছিলাম তখন। বিষয়টি নিয়ে বোমানের সঙ্গে অনেক বিতর্ক
হয়েছে আমার। এরপর থেকে আমি যখন আমার ছবির কোনো চরিত্রের কথা ভাবি, তখন কখনোই সেই চরিত্রকে ‘ভিলেন’ হিসেবে ভাবি না। কারণ সে তাঁর জীবনে তো
‘হিরো’। নিজের জীবনে মানুষ কখনো নিজেকে ‘খলনায়ক’ হিসেবে দেখে না। সে কখনোই ভাবে
না যে সে একজন খারাপ মানুষ।
সুতরাং এখন আপনি বুঝতেই পারছেন, আমরা আমাদের মাথার ভেতর আসলে গল্প তৈরি করি, ভিলেন
বানাই।
কিছুদিন আগে মুম্বাই ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের সঙ্গে আমার
দেখা হয়। তিনি বলেন, ক্লাসরুমভিত্তিক শিক্ষার দিন শেষ হয়ে
গেছে। এখন আমাদের বাচ্চাদেরও হাতে পৌঁছে গেছে আইপ্যাড, আইফোন।
এ যন্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে সবচেয়ে ভালো শিক্ষক।
থ্রি ইডিয়টস দেখার পর কত মানুষ আমার কাছে এসেছে, আমি তা বলে বোঝাতে পারব না। তারা বলেছে, তাদের
মধ্যে কত গলদ আছে! আমি আপনাকে বলতে পারব না যে কত প্রকৌশলী আমার কাছে এসেছেন।
তাঁরা বলেছেন, ‘আমরা ভুল পেশায় আছি। আমরা এখন কী করব?
আমরা এ পেশা ছাড়তেও পারি না। ভয় লাগে, কারণ এটাই যে আমাদের উপার্জনের পথ। কেউ কেউ অবশ্য ছেড়েও দিচ্ছেন। কিছু
চিকিৎসকের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে, তাঁরা তাঁদের পেশা
ছেড়ে দিয়েছেন।’
উপাচার্য মহাশয় সেদিন আমাকে বলেছিলেন, ‘আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় গলদ আছে। শিক্ষাব্যবস্থার বদল প্রয়োজন।
কিন্তু এটা বদলাতে সবাই ভয় পায়। যেদিন আমরা এই ভয় থেকে মুক্ত হতে পারব, সেদিনই সত্যিকার পথ খুঁজে পাব।’
আমার মনে হয়, জীবনে সফল হওয়ার
জন্য যেকোনো একটা বিষয় প্রয়োজন। কিন্তু মানব সম্প্রদায় হিসেবে আমরা বরাবরই
আমাদের জীবন ও মনকে উদ্ভট পথে পরিচালিত করি। বেঁচে থাকার জন্য কিছু অর্থ উপার্জন
করুন। দ্যাটস অ্যানাফ!
যাহোক, আমি শিক্ষা নিয়ে কথা বলছিলাম।
বলছিলাম যে আমরা আসলে বাস করি কয়েক হাত ঘুরে আসা জ্ঞানের মধ্যে। বিষয়টি আর একটু
পরিষ্কার করে বলা দরকার। যখন একটি পশু মারা যায়, সে আসলে
মারাই যায়। পশুদের এমন কোনো প্রজন্ম নেই যারা তাদের জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে
সরবরাহ করতে পারে। কোনো পশুই বই লিখতে পারে না, যে বই
বছরের পর বছর অন্য প্রাণীরা পড়তে পারে, কিন্তু মানুষ
পারে। তাই মানুষের জ্ঞান আসলে ‘সেকেন্ডহ্যান্ড নলেজ!’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকার
Thanks...
====>
Always feel free to SHARE so
that your friends can can know these informations. Keep
visiting this blog site for
more. U
also can submit your email to SUBSCRIBE
this blog.
Thanks
again. :)
No comments:
Post a Comment