৪ দিন, ৬৫৭কিমি.+ সাইক্লিং, ১০ জেলায়
সাইক্লিং, পুরা ময়মনসিং অঞ্চল ভ্রমন শেষ... তাও আবার একা একা সাইক্লিং করে...!!!
আজকে সেই গল্পই শোনাবো আপনাদের। শোনাবো লাউছাপড়া ট্রেইল এর কথা, গারো পাহাড় এর
কথা, হাটি চলাচলের পথে সাইক্লিং আর হাতি দেখার ঘটনা...
আমাদের সেমিস্টার ফাইলান চলছে। পরীক্ষা
হবার কথা ছিল ২ তারিখে একটা। কিন্তু ৩০ তারিখে বিএনপি এর হরতাল ঘোষণা হয় রাত ৮ টার
দিকে। আর পরের পরীক্ষা ১৪ তারিখের আগে সম্ভব না। হাতে আছে ১৫ দিন সময়...!!! কি করি
কি করি... ভাবতে ভাবতেই পেয়ে গেলাম রুট প্ল্যান। যদিও আগের প্ল্যান ছিল বাসে করে
দুর্গাপুর যাব, সকালে পৌঁছে সাইক্লিং করে ময়মনসিং এসে এক রাত থেকে পরের দিন মধুপুর
গড় হয়ে জামালপুর দিয়ে শেরপুর দিয়ে ঝিনাইগাতি গারো পাহাড়, গজনি অবকাস কেন্দ্র থেকে
ঘুরে ঝিনাইগাতি থেকে বাসে করে ঢাকা ব্যাক।
কিন্তু বাস চলাচল বন্ধ বলে এটাকে মডিফাই
করে এমন করে করলাম যাতে পুরা রাস্তা আমাকে শুধু সাইক্লিং করেই কাটাতে হয়... ফলে
রুট প্ল্যান দাঁড়ালোঃ
২য় দিনঃ জামালপুর > শেরপুর > গারো পাহাড় > গজনি > হালুয়াঘাট > দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)
৩য় দিনঃ দুর্গাপুর > ময়মনসিং > কিশোরগঞ্জ
৪র্থ দিনঃ কিশোরগঞ্জ > নরসিংদী > রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) > ঢাকা
রুট টা
এমনভাবে বানালাম যাতে প্রথম দিন সব থেকে বেশি সাইক্লিং আর শেষের দিন সব থেকে কম।
আর চেষ্টা করলাম একদম হাইওয়ে এভয়েড করে সাইক্লিং করতে।
৩১ তারিখে সারাদিন ব্যয় করলাম সাইকেলের
পিছে, ঠিকঠাক করলাম, ওয়াশ-লুব করালাম, ব্রেক চেক করলাম, এক্সট্রা টিউব কিনলাম
দুইটা, পাম্পার এ সমস্যা ছিল বলে আরেকটা কিনেই ফেললাম একেবারে।
[Click on the each photo to see in better view, or CLICK HERE for the FACEBOOK PHOTO ALBUM.]
[Click on the each photo to see in better view, or CLICK HERE for the FACEBOOK PHOTO ALBUM.]
১ম দিন এর রুট...
১ তারিখ ভোরে ফজরের নামাজ পরেই সাইকেল নিয়ে বের হলাম, জিপিএস লক করে এন্ডোমন্ডো চালু করে বেড়িয়ে পরলাম আল্লাহ এর নাম নিয়ে। গাবতলি পাড় হয়ে আমিনবাজার এর দিকে একটা ড্রাফটিং পেয়ে গেলাম ভালো মতো সেটার পিছে পিছে চন্দ্রা গেলাম। তারপর কালিয়াকৈর এ গিয়ে নাস্তা করলাম সকালের। এরপরেই হাইওয়ে শেষ, গড়াই বাজার থেকে ডান দিকের রোড ধরে চলে গেলাম টাঙ্গাইল এর সখিপুর এর দিকে। অনেক সুন্দর একটা পথ ধরে পৌঁছে যাই সখিপুর এ ৮০ কিমি. এর পরে। সেখানে ফায়ার সারভিস স্টেশন এ থামি প্রাকৃতিক কাজের জন্য। পরিচয় হয় সেখানকার এক কর্মকর্তার সাথে... কথা হয়, সব কিছু শুনে অবাক তিনি... মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় সেখানে পৌঁছে গেছি শুনে সেই অবাক...!!!
সখিপুর ফায়ার সার্ভিস এ... |
সখিপুর জিরো পয়েন্ট এ... |
সেখানে রাস্তার পাশেই একটা সুন্দর মসজিদ দেখে থামি আমি। ধলাপাড়া জামে মসজিদ, প্রতিষ্ঠিত ১৩২৩ বাং এ। সেখানকার এক ছেলের কাছ থেকে ছবি উঠিয়ে নেই। কথা থেকে জানতে পারলাম মতিউর নামের এই ছেলেটি এপরজন্ত ৩ বার কোরআন শরীফ খতম করেছে...!!! আর আমি কি করলাম এই জীবনে???
ধলাপারা জামে মসজিদ এর সামনে... |
তাদেরকেও কেক খেতে দিলাম। তাদের কাছ থেকে
পানি আনিয়ে খেলাম... ১১ জন মিলে দুইটা কেক খেলাম আমরা। J আসলে দেখেন এই পিচ্চিদের খুশি করতে
আপনাকে খুব বেশি কিছু করতে হবে না, তাদেরকে কেএফসি বা স্টার কাবাব এ খাওয়াতে হবে
না, এরকম একটা কেক যদি ২০ জন মিলেও ভাগ করে খান তাতেই তারা খুশি। তারা আপনার টাকা
পয়সা দেখবে না, দেখবে আপনার স্নেহ আর ভালোবাসা মাখানো কথাবার্তা।
আমার খুদা লেগেছে শুনে এখানকার এক পিচ্চি
মেয়ে আমাকে তার টিফিন এক রকম জোর করেই খাইয়েছে... :D আমার অনেক খুদা লেগেছিল
কিন্তু আমি আমার দুইটা কেকই তাদের সাথে খেয়ে ফেলেছি বলে সে তার টিফিন আমাকে দিছি।
না করার কোন উপায় ছিল না আমার। আর এরকম আন্তরিকতাঁকে কিভাবে আমি না করি বলেন...!
প্যাক খুলে দেখি একটু খানি মোটা চালের ভাত, সাথে অল্প পেয়াজ মরিচ দিয়ে কম তেলে ডিম
ভাজি আর একটু খানি ডাল। সেটাই পেট পুরে তৃপ্তি সহকারে খেলাম।
এরপরে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসার
পালা। কিন্তু তখন আবার বাধ সাধল আরেক পিচ্চি। পিক এর সব থেকে ছোট পিচ্চিটা (নাম
ফাহিম) আমাকে তার বাসা নিয়ে জাবেই যাবে। :D জিজ্ঞেস করলাম খাওয়াবা কি? বলল, পুকুর
থেকে মাছ ধরে রান্না করে আমাকে ঝোল করে খাওয়াবে। রাধবে কে? জানালো তার আম্মু ঢাকায়
গার্মেন্টস এ কাজ করেন, তার নানী রান্না করে খাওয়াবে।
শুনে ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম... বেশ
কিছুক্ষন চেপে ধরে রাখলাম... এরকম আন্তরিক আমন্ত্রন আর কোথায় পাবো আমি? তার বাসায়
কিছু না থাকতে পারে, হয়তো একটু মোটা চালের ভাত খেতে হতে পারে... কিন্তু তাতে কি...
এদের কাছ থেকে যে আমন্ত্রন আমি পেলাম তাতে আসলেই মেশানো ছিল খাঁটি আন্তরিকতা...
যাক, ফেরার সময় সবাইকে জড়িয়ে ধরলাম,
হ্যান্ড সেক করলাম, ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার, ভালোভাবে পড়াশুনা করার উপদেশ দিয়ে চলে
এলাম। আর কিছুক্ষন পরেই পৌঁছে গেলাম মধুপুর।
প্রবেশ করেই চৌরাস্তায় বিশাল সাইজের
আনারস এর প্রতিকৃতি দেখে প্রান জুড়িয়ে গেল... বাস স্ট্যান্ড এর মসজিদ এ নামাজ পরে
পেট পুরে খেলাম গো মাংস দিয়ে। এখানে বলে রাখি, আমি যখনই কোন লং রাইড এ আসি, সব সময়
দুপুরের খাওয়া খাই গো মাংস দিয়ে। এতে শরীরে একটা জোস চলে আসে... অনেক এনার্জি পাই। (এটা আমার ব্যক্তিগত অব্জারভেশন)। যাইহোক এরপরে মিষ্টি আর দই
খেলাম।
মধুপুরঃ আনারসের দেশে... |
বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের সামনে... |
মধুপুর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এ... |
রেস্ট নেবার সময় জিপিএস আর ম্যাপ থেকে দেখতে পেলাম মাত্র ১০ কিমি. পাশেই পরেছে ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান তথা মধুপুর গর। মধুপুর আসলাম আর এতো কাছ থেকে চলে যাব মধুপুর গর এর তাতো হয় না, হতে দেওয়া যায় না... সাথে সাথেই সাইকেল নিয়ে গেলাম জঙ্গল এ... জলছত্র তে... পাশেই হাওদা বিল... কিছু সময় থেকে ফুডুশুট করে আনারস বাগান দেখে আবার চলে এলাম মধুপুর। এর পরের যাত্রা জামালপুর এর দিকে...
নিয়াজ মোর্শেদ ভাই আগে বলে দিছিলেন ধনবাড়ি ক্রস এর সময় যেন অবশ্যই সুর্জকান্ত এর মিষ্টি খাই... সেটা তো মিস করতে পাড়ি না... সো থেমে পরলাম এখানে। কিন্তু এই দোকান খুজতে গিয়ে দেখি একই নামে দুইটা দোকান। :O :O পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেলাম যে ভিতরের টা আসল। সেখান থেকে মিষ্টি চেখে চলে গেলাম জামালপুর এর দিকে...
পৌঁছে গেলাম জামালপুর এ সন্ধ্যা ৬ টা ৮ মিনিটে। হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম শহর দেখতে। আগে থেকেই খোঁজ নেওয়া ছিল বলে সব কিছু বেশ চেনাজানা ছিল। প্রথমেই গেলাম দয়াময়ী মোড়ে বুড়ির দোকানের মিষ্টি খেতে। সেই টেস্ট। তারপর খেলাম চিংড়ি এর ফ্রাই। গেলাম দয়াময়ী এর মন্দির দেখতে। সেখান থেকে গেলাম বেশ দূরে হজরত জামাল (রঃ) এর মাজার জিয়ারত করতে। এনার নামেই জামালপুর জেলার নামকরন করা হয়েছিল। পরে সেখান থেকে সরাসরি হোটেলে ফিরে এলাম।
বুড়ি মা এর দোকান এর মিষ্টি... |
দয়াময়ীর মন্দির |
রজরত জামাল (রঃ) এর মাজার |
রজরত জামাল (রঃ) এর মাজার এর সামনে... |
আর আজকে সারাদিনে অনেক বেশি খাওয়াদাওয়া হয়েছিল বলে রাতে আর কিছু খেলাম না। ঘুমাতে গেলাম...
Thanks...
====>
Always feel free to SHARE so
that your friends can can know these informations. Keep
visiting this blog site for
more. U
also can submit your email to SUBSCRIBE
this blog.
Thanks
again. :)
এই রুটটা ফলো করার ইচ্ছা রাখছি। :) সুন্দর জার্ণি
ReplyDeleteKorchen vai ei route?
Delete