যখন ইউসুফ ভাইয়ের পোস্ট দেখলাম যে ২০০
কিমি. এর একটা লং রাইড দেবেন তিনি প্রায় সাথে সাথেই রাজি হয়ে যাই। যদিও একটু
দোটানায় ছিলাম। ২০০ কিমি. রাইড যে দেই নাই এমন না... দিছিলাম। কিন্তু সেটা ঢাকার
মধ্যেই। গত ১৩ই নভেম্বর শুধু হাতিরঝীল এই ২৬টার মতো ল্যাপ দিয়ে এই ২০০ কিমি.
সাইক্লিং করেছিলাম লিঙ্কঃ ( ক্লিক )।
আর এজন্যই সমস্যা মনে করেছিলাম। যে আমি ঢাকার বাইরে এতদুরে যেতে পারবো তো? আমি
একদিনে ৩০০ কিমি. দেবার মতো সাহস পর্যন্ত করি। কিন্তু তবুও ভয় থাকার কারণ হল ঢাকার
বাইরে যাওয়া।
যাই হোক, ঘুমাতে গেছি রাত ১ টায়। ব্যাগ গোছাতে হইছে। সাইকেল সাজাইতে হইছে। সেফটি গিয়ার আর ইনস্ট্রুমেন্টস নিতে হইছে। সবাইকে বলেছিলাম সবাই যেন আমাকে ৪.৩০ এ কল করে ডেকে দেয়। যদি আবার ঘুম থেকে উঠতে না পাড়ি এজন্য। যাইহোক, সুন্দর মতো কোন অ্যালার্ম ছাড়াই, কারো ফোন কল ছাড়াই ঠিক ৪ টায় ঘুম থেকে উঠে পড়ি। ফ্রেশ হয়ে, সাইকেল চেক করে, পানি খেয়ে সাইকেল নিয়ে নিচে নামি। এর মধ্যেই ইউসুফ ভাই ফোন করে যে উঠেছি কি না। :D
আমি যখন সাইকেল নিয়ে নামলাম তখন দেখি জুনিয়ররা ব্যাডমিন্টন খেলতেছে। আমাকে আবার এতো রাতে সাইকেল নিয়ে বের হতে দেখে অনেকেই অনেক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো কই যাচ্ছি। কাউরেই কিছু বলি নাই... খালি কইছি সাইক্লিং করতে... :D
হলে থেকে এন্ডোমোন্ডো অন করে বের হই ঠিক ৪.৫৮ এর সময়ে। ৫.০২ এর সময়ে হাতিরঝীল এর আমাদের র্যালি পয়েন্ট এ পৌছে মাহবুব ভাইকে ফোন দেই। তিনি আর রানা ভাই এসে জানান যে মাহাবুব ভাই যাইতে পারবেন না সর্দি জ্বর এর কারণে। অবশেষে আমি আর রানা ভাই শুরু করি। আমাদের নেক্সট র্যালি পয়েন্ট হল সাইনবোর্ড এর ৫ কিমি. পরে ইউসুফ ভাই এর বাসার কাছে। ঘুটঘুটে আন্ধার রাইতে হেড লাইট আর টেইল লাইট জ্বালিয়ে দুজনে মিলে খিলগাঁ ফ্লাইঅভার হয়ে যাত্রাবাড়ী হয়ে কিছুক্ষনের মাঝেই চলে র্যালি পয়েন্ট এ। আসতে আসতে ১৭ কিমি. হয়ে যায় আমাদের। সেখানে ফজরের নামাজ পরে নেই, সকালের নাস্তা (দুই পরোটা, ডিম, ভাজি আর একটা চা) সেরে নেই। ইউসুফ ভাইও চলে আসেন। প্ল্যান ছিল ৬ টায় রাইড শুরু এখান থেকে আর ঠিক ৬.০১ এ রাইড শুরু করি। J
প্ল্যান
মতো সেখানে পৌছার আগেই একবার নাস্তা করে নিছিলাম। আসলে রাস্তার অবস্থা অনেক খারাপ
ছিল বলে অনেক ক্লান্ত হয়ে পরেছিলাম আর এজন্যই রেস্ট এর জন্য থেমে পুরি, আলুচপ দিয়ে
নাস্তা সেরে সাইক্লিং করে রামগঞ্জ পৌঁছে যাই। সেখানে গিয়েই সেরকম খাওয়া দেই তিনজন
মিলে। আমার ফরমায়েশ মতো গরুর মাংশ দিয়ে মেরে দিলাম তিন জনে ৭ প্লেট এর মতো ভাত। আর
এরপরে ৯ টা মিষ্টি (সম্ভবত)। এরপরে চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম
টের পাই নাই। :D
The three cyclists; Somewhere in Chandpur |
যাই হোক, দুরু দুরু বুকে রাজি হয়ে
গেলাম। আরেকজন রাজি হয়ে গেল। মাহাবুব ভাই। আবার রানা ফরিং ভাইও রাজি হয়ে গেল। ৪ জন
যাচ্ছি তাহলে। আর এটাও আমি কনফার্ম করি রাইড এর আগের রাত ১১ টার দিকে। অনেকেই হয়তো আমার উপরে রাগ করেছে যে তাদের জেলায় গেছি আর তাদেরকে
জানাই নাই কেন, তাদের সাথে দেখা করি নাই কেন... আরে ভাইরে, আগের দিন রাত ১১ টায়
আমি কনফার্ম করেছি। জানানর সময় পেলাম আর কই... এটা নিয়ে প্রায় ১০ টা কমেন্ট আর ৮
টা মেসেজ পেয়েছি। এই অনুযোগ করে। মাফ করে দিও সকল ভাই ও বোনেরা।
The Video of this tour, better watch it in HD, also feel free to COMMENT and SUBSCRIBE to my YOUTUBE CHANNEL :)
The Video of this tour, better watch it in HD, also feel free to COMMENT and SUBSCRIBE to my YOUTUBE CHANNEL :)
যাই হোক, ঘুমাতে গেছি রাত ১ টায়। ব্যাগ গোছাতে হইছে। সাইকেল সাজাইতে হইছে। সেফটি গিয়ার আর ইনস্ট্রুমেন্টস নিতে হইছে। সবাইকে বলেছিলাম সবাই যেন আমাকে ৪.৩০ এ কল করে ডেকে দেয়। যদি আবার ঘুম থেকে উঠতে না পাড়ি এজন্য। যাইহোক, সুন্দর মতো কোন অ্যালার্ম ছাড়াই, কারো ফোন কল ছাড়াই ঠিক ৪ টায় ঘুম থেকে উঠে পড়ি। ফ্রেশ হয়ে, সাইকেল চেক করে, পানি খেয়ে সাইকেল নিয়ে নিচে নামি। এর মধ্যেই ইউসুফ ভাই ফোন করে যে উঠেছি কি না। :D
আমি যখন সাইকেল নিয়ে নামলাম তখন দেখি জুনিয়ররা ব্যাডমিন্টন খেলতেছে। আমাকে আবার এতো রাতে সাইকেল নিয়ে বের হতে দেখে অনেকেই অনেক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো কই যাচ্ছি। কাউরেই কিছু বলি নাই... খালি কইছি সাইক্লিং করতে... :D
The Endomondo route and the speed graph.
গতকাল সারাদিনের বিভিন্ন সময়ের এর খাবারের লোকেশনগুলা
দেখেনঃ
১. খালি পেটে পানিঃ ঢাকা ( 4011, Osmani Hall, BUTex, Dhaka)
২. ভোরের নাস্তাঃ নারায়ণগঞ্জ
৩. সকালের পানিপানঃ মুন্সিগঞ্জ (গোমতী নদীর ব্রিজে)
৪. সকালের খাবারঃ কুমিল্লা (চান্দিনা)
৫. দুপুরের নাস্তাঃ চাঁদপুর (শাহরস্তি)
৬. দুপুরের খাবারঃ লক্ষ্মীপুর
৭. রাতের চা-পানঃ লক্ষ্মীপুর (মান্দারি বাজার)
৮. রাতের নাস্তাঃ নোয়াখালী
৯. রাতের খাবারঃ কুমিল্লা
১০. গভীর রাতের খাবারঃ ঢাকা (Osmani Hall,
BUTex.)
হলে থেকে এন্ডোমোন্ডো অন করে বের হই ঠিক ৪.৫৮ এর সময়ে। ৫.০২ এর সময়ে হাতিরঝীল এর আমাদের র্যালি পয়েন্ট এ পৌছে মাহবুব ভাইকে ফোন দেই। তিনি আর রানা ভাই এসে জানান যে মাহাবুব ভাই যাইতে পারবেন না সর্দি জ্বর এর কারণে। অবশেষে আমি আর রানা ভাই শুরু করি। আমাদের নেক্সট র্যালি পয়েন্ট হল সাইনবোর্ড এর ৫ কিমি. পরে ইউসুফ ভাই এর বাসার কাছে। ঘুটঘুটে আন্ধার রাইতে হেড লাইট আর টেইল লাইট জ্বালিয়ে দুজনে মিলে খিলগাঁ ফ্লাইঅভার হয়ে যাত্রাবাড়ী হয়ে কিছুক্ষনের মাঝেই চলে র্যালি পয়েন্ট এ। আসতে আসতে ১৭ কিমি. হয়ে যায় আমাদের। সেখানে ফজরের নামাজ পরে নেই, সকালের নাস্তা (দুই পরোটা, ডিম, ভাজি আর একটা চা) সেরে নেই। ইউসুফ ভাইও চলে আসেন। প্ল্যান ছিল ৬ টায় রাইড শুরু এখান থেকে আর ঠিক ৬.০১ এ রাইড শুরু করি। J
On Meghna bridge |
Breakfast at Narayanganj |
ঠিক করে নেই যে ১০ কিমি. পরে পরে লিড
চেঞ্জ হবে। প্রথম ১০ কিমি. ইউসুফ ভাই, পরের ১০ কিমি. রানা ভাই, আর এরপরের ১০ কিমি.
আমি। আমার পালা যখন আসে তখন এভারেজ ছিল ২৩ kmph
, আর আমার ১০ কিমি. পরে এই এভারেজ পৌঁছে যায় 25.28 kmph। এরপরে অবশ্য কমায়া দিছিলাম। এভাবে যেতে যেতে নারায়ণগঞ্জ এর সোনারগাঁ
পার হয়ে যাই। এক সময় এত বেশি কুয়াশা পরেছিল যে আমার টেইল লাইট জেলে দিতে হয়েছিল...
On Gomoti bridge |
এরপরে মেঘনা ব্রিজ এ আপহিল মারতে জোস
লাগতেছিল। আর নামার সময় তো কথাই নাই। :D সুন্দর সুন্দর কিছু ভিডিও করেছিলাম এই
সময়। ক্যামেররা ছিল হেডলাইট হোল্ডার এ। সময় পেলে ভিডিওগুলা এডিট করে ইউটিউব এ
আপলোড করে দিব। এরপরে সামনে পরে গোমতী নদী। ইউসুফ ভাই আগেই সাবধান করে দিছিলেন। আসলেই
এই ব্রিজটা খুবি চিপা। পাশাপাশি দুইটা বাস গেলেও মনে হয় আর জায়গা নাই। L এজন্য পাশ দিয়া উলটা দিক থেকে বাস এলে আমার পিছে বাস বা
ট্র্যাক এসে ব্রেক করতেছিল। অনেক ভয় লাগতেছিল তখন। তবে বাস আর ট্র্যাক এর
ড্রাইভারদেরকে থ্যাংকস দিতেই হয়। তারা আমাদের জন্য বার বার ব্রেক করতেছিলেন। যারা
যারা গোমতী ব্রিজ এর উপরে দিয়ে সাইক্লিং করবেন তারা এব্যাপারে সাবধান থাইকেন। নইলে
সমস্যা হতে পাড়ে আপনার। আর একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যদি এই ব্রিজ এ থেমে ছবি
উঠাতে চান তবে সাইকেল থামার আগেই ফুটওয়ে তে সাইকেল তুলে ফেলবেন। ভুলেও ব্রিজ এ
রাখবেন না। অনেক অনেক অনেক চিপা একটা ব্রিজ। আমরাও এটা করেছিলাম। সাইকেল হাল্কে
ব্রেক করে থামার আগেই সাইকেল সহ ফুটওয়ে তো উঠে পরেছিলাম। এরপরে সেখানে কিছু
স্যালাইন খাই, পানিও। হালকায় রোদ উথতেছিল ছিল সানস্কিন ক্রিমও মেখে নেই। কিছু ফটো
শুট করে ডাউনহিল মারা শুরু করি।
ইউসুফ ভাই বললেন, “চলেন ড্রাফটিং করি। “
আমি এর আগে কখনো ড্রাফটিং করি নাই বলে সাহস পাচ্ছিলাম
না। পরে তাদের দেখাদেখি আমি ড্রাফটিং করা শুরু করি। দেখি ভালোই মজা পাওয়া শুরু করি। অবাক হয়ে খেয়াল করে
দেখলাম আমার জেনারেল স্পীড যেখানে ২৫-৩০ এর মতো সেখানে ড্রাফটিং এর স্পীড এমনিতেই
৩৫+ হয়ে যাচ্ছে। আর পরে চেক করে দেখেছি যে আমার কালকের ড্রাফটিং এর ম্যাক্স স্পীড
ছিল ৭০.২ kmph…!!! আমি নিজেই অবাক হইছি।
ড্রাফটিং আসলেই অনেক মজার আর এডিক্টিভ একটা জিনিস। J কালকের রাইদেই সেটা বুঝেছি।
পাশ দিয়ে কোন ট্র্যাক যেতে দেখলেই দেখলাম
সেটা কিসের ট্র্যাক। তারপর শুরু করতাম ড্রাফটিং। আর ট্র্যাক এর এসিস্টেন্ট গুলাও
আমাদের জানত মনে হয়। অনেক দেখলাম তারাই হাতের ইশারা করে আমাদের ডাকতেছে। আর আমরাও
তাদের ডাকে সারা দিয়ে ড্রাফটিং করা শুরু করতাম। তারপর তাদের স্পীড কোন কারণে কমে
গেলে তাদের পাস করে চলে জেতাম, যাবার সময় থ্যাংকস দিতাম ইশারা করে। আবার নতুন কোন
ট্র্যাক এর অপেক্ষায় থাকতাম। J ড্রাফটিং করে করে এমন অবস্থা হয়ী গেছিল
যে আমাদের যেখান থেকে হাইওয়ে থেকে নেমে যাবার কথা সেটা আমরা প্রায় ১৫ কিমি. দূরে
ফেলে এসেছি। :D হয়তো তাও আমরা থামতাম না। ইউসুফ ভাই এর পিছের চাকা পামচার হয়ে
যাওয়ায় থেমেছিলাম। আর তখনই এন্ডোমন্ডো বের করে ম্যাপ বের করে দেখি এই অবস্থা... :D
Repairing the tube |
D result of drafting |
প্ল্যান ছিল গৌরীপুর এ দক্ষিন দিকে
যাওয়া শুরু করে সিঙ্গুয়া, নাসিরপুর হয়ে চাঁদপুর এর শাহরস্তি পৌছাব। কিন্তু ভানি এর
চান্দিনা (কুমিল্লা) পৌঁছে গেছি। সেখানে ১০ মিনিট এর মদ্ধে লিক সারালাম। এরপরে
সেখানে সকালের নাস্তা করলাম। তারা পরাটা খেলেও আমার আবার তিনবেলা ভাত না হলে চলে
না বলে হালকায় ভাত খেয়ে নিলাম। এরপরে আমাদের বিকল্প রুট ঠিক করে আবার যাত্রা শুরু
করলাম।
D surprised crowd |
Banana Selfie |
মহিলা কলেজ... ;) |
D 3 selfie... :p |
Taking prayer on a van; D legless person |
এরপরে নবাবপুর হয়ে, কচুয়া হয়ে
শাহরস্তি পৌছে গেলাম। সেখান থেকে হাজিগঞ্জ। অবশ্য হাজিগঞ্জ এর ২ কিমি. আগে জুম্মার
নামাজ পরে নেই।
আমার হাটুতে সমস্যা থাকায় আর থ্রি-কোয়ার্টার পরে থাকায় নামাজ পড়তে
পারলাম না। L আর এজন্য আমাকে বাইরে সাইকেল এর ব্যাগ
এর পাহারায় থাকতে হইছে। এই হাটুর আঘাতের
কারণে সপ্তাহ খানেক কোন নামাজ পড়তে পাড়ি
নাই। সেখানে দেখলাম এক লোক এর পা নাই। তিনি একটা ভ্যান এর উপরে বসে নামাজ আদায়
করলেন। দেখে খুব খারাপ লাগলো নিজে না পড়ার কারণ। আমি আবার সেখানে একটা ভ্যান এর
উপরে বসে রেস্ট নিতে নিতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম টের পাই নাই। :D
সেখান থেকে পৌঁছে যাই হাজিগঞ্জ এ। সেখানে
ঐতিহাসিক বড় মসজিদ এ দারাই। সেখানে কিছু পিক তুলে আসতে আসতে বাজারের মদ্ধে দেখতে পাই
এক আজব গরুর। যেটা জন্মছে একটা সিং নিয়া।
সেটার সাথেও সেলফি তুললাম। তারপর রামগঞ্জ এ। প্ল্যান ছিল সেখানে দুপুরের
খাবার।
Sleeping on a break :D |
Earned the sallute :) |
Leaving Chandpur |
Both r sleeping after the great meal. :) |
গতকাল ৭ জেলা ভ্রমনের সময়ে আনুমানিক ৪ টার দিকে
(লক্ষ্মীপুর পাস করতেছি) একটা ফোন কল আসে। কানে হেডফোন থাকায় সাথে সাথেই রিসিভ
করি।
- হ্যালো।
- হাই...
- কে, বাপ্পী ভাইয়া বলতেছেন?
- হ্যা। বাপ্পী ভাইয়া বলতেছি...
- i love u...
আমি তো একেবারে থ... এতোটাই হতচকিয়ে গেছি যে সাথে সাথেই
নিজের অজান্তেই ব্রেক করে ফেলি। প্রায় ২০ ফিট এর মতো স্কিড করে চলে যাই। কানেই
হেডফোন। আমি আর কিছু বলতে পারতেছিলাম না।
- শুনেছেন কি বলেছি?
- হ্যা। কিন্তু কনফিউজড যে ঠিক শুনেছি কি না...
- i love u...
- ও আচ্ছা। ঠিক আছে...
এরপরেই ফোন কেটে যায়। আর আমিও ভ্যাবলার মতো রাস্তার মাঝে
সাইকেল নিয়া ৯০ ডিগ্রী আঙ্গেল এ দাড়িয়ে থাকি।
... ট্র্যাকের হর্ন শুনে সম্বিত ফিরে পাই। ততোক্ষণে
সাথের রাইডাররা অনেক এগিয়ে গেছে। নিশানার বাইরে। এরপরে আর কিছু না করে হু হু করে
টান... তাদের সাথে পরে দেখা...
পরে লক্ষ্মীপুর সদর এ গিয়ে ব্রেক নেবার সময় ফোন চেক করলাম
নাম্বারটা দেখার জন্য। কিন্তু ততোক্ষণে আরও ১৮ টা ফোনকল রিসিভ করেছিলাম বলে কোন
নাম্বারটা আসলে তার সেটা আর বের করা পসিবল হল না... শুধু শিওর, যে ফোন করেছিল তার নাম্বার টা আমার ফোনে সেভ করা ছিল না। আর তার কণ্ঠ
মনে হয় মধুতে ভরা। এখনো কানে বাজে সেই কণ্ঠ।
হয়তো আর কখনো শোনা হবে না।
যাই হোক, ভালমত রেস্ট নিয়া বেড়িয়ে পড়ি
সাইকেল নিয়া। পৌঁছে যাই লক্ষ্মীপুরে। সেখানে সদর এ কিছু পিক তুলি। সেখানেই মাগরিব
এর আজান দিয়ে দেয়। কি আর করার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নোয়াখালী তে পৌছাতে হবে এই নিয়াত
করে আবার রাইড শুরু করি।
At Laxmipur Sadar :) |
আবার শুরু হয় ড্রাফটিং। :D যদিও রাতের
বেলা ড্রাফটিং করতে আমি কিছুটা ভয় পাচ্ছিলাম। কিন্তু ভালো টেইল লাইট আছে, সাথে
লেজার এর মারকিং লাইন আর সাইকেলের চারদিকে। এজন্য ভাইয়াদের দেখাদেখি আমিও শুরু করি
ড্রাফটিং। কিছুক্ষন পরে খেয়াল করে দেখলাম আসলে রাতের ড্রাফটিং এ বেশি মজা... :D
স্পীড গ্রাফে দেইখেন লক্ষ্মীপুর থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত স্পীড এর ভেরিএসন। :D এমনও
হয়েছে যে সিএনজি এর পিছনেও ড্রাফটিং করে করে গেছি। রানা ভাই এই রাতের আধারে জেই ড্রাফটিং
দেখাইছে কি বলি... :D
ছোট কাজের জন্য একবার মান্দারির বাজারে
থেমেছিলাম। সেখানে আবার অসাম একটা চা পান করি। এখানে আবার ইউসুফ ভাই এর এক মজার
কাহিনী আছে। আমি তার স্ট্যাটাস টা দিয়ে দিচ্ছিঃ
“চরম মজাদার কাহীনি।
“চরম মজাদার কাহীনি।
গতকাল এই সময়ে আমরা লক্ষ্মীপুর পার হয়ে
মান্দারী বাজার নামের এক জায়গায় টি ব্রেক দিয়েছিলাম। আসলে সেখানে আমাদের ১
নাম্বারের প্রেশার ছিলো তাই থেমেছিলাম। একটা বিশাল চায়ের দোকানে বেশ ঝটলা দেখলাম
এবং বুঝলাম চায়ের জন্য বিখ্যাত হবে এই দোকান। অনেক মুরুব্বি আর হোলাহাইন
(পোলাপাইন) বইসা আছে চা খেতে।
১ নাম্বার কাজ সারবো কোথায় এক ভাইকে
জিজ্ঞেস করায় তিনি অনেকগুলো দোকানের পরে অন্ধকারে দেখিয়ে বললেন সেরে আসেন সেখানে।
আমি আর বাপ্পি ভাই পর পর সেইখানেই সেরে আসি এবং চা খেয়ে রওনা হই। অনে দূর আসার পরে
বউয়ের সাথে ফোনে আলাপ করি। আর আশ্চর্য রকম ঘটনা শুনি।
আমি জানি যে এই লক্ষিপুরেই আমার না
শ্বশুরের বাড়ি। কিন্তু কোথায় আমার সঠিক জানা নেই।
সেই মান্দারী বাজার পার হয়ে বউ কে বললাম, আমি কিন্তু লক্ষ্মীপুর আইমিন নানা
শ্বশুরবাড়ির এলাকা ছেড়ে আসছি। এবং বললাম যে একটা বাজারে টি ব্রেক দিলাম। তখনো সে
আমার সেই স্ট্যাটাস দেখেনি।
তাকে বাজারের নাম বলায় সে বলছে সেইটাই
আমার নানা শ্বশুরের বাড়ির বাজার। আর যেখানেই আমরা ১ নাম্বার সেরেছিলাম সেখানেই
নানা শ্বশুরের বাড়ি। ঠিক তার অপোজিট এ আমার শাশুড়ির নানার বাড়ি।
হায় হায়, আমরা এ কি কাজ করলাম? শেষ পর্যন্ত নানা শ্বশুরের বাড়িতে এসে এই কাজ সেরে আসছি!!!!
আর চা ও খেয়ে আসলাম টাকা দিয়া? আমি জানলে তো নাতিন জামাই পরিচয়ে
ফ্রি আরো কিছু খেয়ে আসতে পারতাম।”
"Halka" হবার পরে... At Chandinar Bazar |
হালকা হবার পরে আবার রাইড শুরু। সেই সাথে
নাইট ড্রাফটিং। চৌমুহনী এর পরে শুরু হয়েছে আমার মেইন ড্রাফটিং এর খেলা। :D ভাল মতো
একটা ইট এর ট্র্যাক পাইছিলাম। সেটার পিছে সেই রকম একটা ড্রাফটিং। চৌমুহনী থেকে
কিভাবে আর কখন যে মাইজদি পৌঁছে গেছি টেরই পাই নাই। পিক উঠাবার জন্য শুধুমাত্র
একবার ভুলু স্টেডিয়াম এ থেমেছিলাম। আর সেই ফাকে রেস্ট ও হয়ে গেছে...
At Vulu stadium |
DC office, Noakhali |
Noakhali |
এরপরে মাইজদি তে ড্রাফটিং করতে করতে। :D সেখানে গিয়েই প্রথমে ডিসি অফিসের খোঁজ
লাগালাম। অবাক হবেন জেনে যে ৮ জনকে জিজ্ঞেস করতে হয়েছিল। অনেকেই জানেই না... :/
যাই হোক ডিসি অফিসের দিকে গেলাম খোঁজ পেয়ে। যেতে গিয়ে আরও অবাক। ডিসি অফিস এর
সামনের রাস্তার জেই দুরাবস্তা দেখলাম!!! সিটে বসতেই পাড়ি নাই সেই রাস্তায়...
সেখানে কিছু ফুডু তুলে চলে এলাম বাসের
খোঁজে। আরও অবাক করা ব্যাপার ঢাকার বাস কই থেকে ছারে কেউ জানেই না মনে হয়...!!!
আজব ব্যাপার... যাই হোক গরু খোঁজা দিয়া বাস পেলাম, বাসের ছাদে সাইকেল উথালাম, দরি দিয়া বাধলাম এর পরে বাসে
উঠেই ঘুম। :D
না...
উঠেই ঘুম না। সোনাইমুড়ি পর্যন্ত জেগে
ছিলাম। পথে পরেছিল নোয়াখালী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। আফসোস যাওয়া হল না।
প্ল্যান মতো চলতে পারলে বিকেলেই নোয়াখালী চলে আসতাম। তাহলে এটাও দেখা হত। এখানকার
ফ্রেন্ডের সাথেও দেখা হত। খুব আফসোস হইছে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল বলে...
যাইহোক,
কোন রকমে সোনাইমুড়ি পর্যন্ত জেগে ছিলাম। এরপরেই আমি ঘুমের রাজ্যে চলে গেছিলাম।
আমার আবার ভালো অভ্যাস বাসে উঠলেই ঘুম পায়। :D
ঘুম
থেকে জেগে উঠি ঠিক ১২.৪০ এর দিকে। কুমিল্লায়। ফেসবুক এ একটা পোস্ট দিয়েই আবার ঘুমায়া
পড়ি। টের পাই নাই কখন ইউসুফ ভাই নারায়ণগঞ্জ এ নেমে গেছিলেন। যাই হোক, ঘুম ভাঙ্গে ফার্মগেট এর কাছে।
মহাখালিতে এসে বাস থেকে নামি, ছাদ থেকে সাইকেল অক্ষত অবস্থায় নামাই। এরপরে রানা
ভাই সহ হলে চলে আসি। আমার আবার খুদা লেগেছিল বলে আবার ভাত খেয়ে নেই রাত ২ টায়।
Selfie after completing the ride, +Osmani Hall |
এরপরে
কিছু সময় ফেসবুক এ কাটিয়ে ঘুম আর এক্কেবারে আজকে সকাল ৯ টায় ঘুম থেকে জাগরণ।
সংক্ষেপে এই ছিল আমাদের একদিনে ৭ জেলা
ভ্রমনের কথা সেই সাথে ২০০কিমি.+ সাইক্লিং এর গল্প। :)
নোয়াখালী নিয়া কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল। পুরা সাইক্লিং এর সবচেয়ে বাজে এবং তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার বা আমাদের। যাক... আমাকে আর কষ্ট করে লিখতে হয় নাই। ইউসুফ ভাই লিখে ফেলেছেন। তার লেখাটা কপি করে দিলাম...
"গতকাল
ঘুরে এলাম চাঁদপুর, লক্ষীপুর এবং নোয়াখালী জেলা। চাঁদপুইরা আর নোয়াখাইল্লাদের কথা বহু
শুনছি। কিন্তু সরাসরি দেখা হয়নাই।
এক কথায় মানুষকে
বোকা বানানোতে হদ্য। আর কানে খাটো,ঘাড় ত্যাড়া,অধিক কিউরিয়াস এবং ফইন্নির ঘরের
ফইন্নি। মানে জীবনে দেখেনাই বলেই কি এমন উতসুক হয়ে ক্রিটিসাইস করা লাগে???
এইসব কয়েক টা
কথা পড়েই কেউ লাফাইয়া উইঠেন না। আইমিন বিশেষ করে নোয়াখাইল্লা রা। আর এইসব কথা
নোয়াখাইল্লাদের সাথে সাথে চাঁদপুইরাদের ও বলছি। কারন পাশাপাশি মানুষ তো তাই।
এবার আসল ঘটনায়
আসি...
আমি এই নতুন দুই
জেলা ব্যাতীত বাংলাদেশের আরো ৩২ জেলাই ঘুরেছি। কিন্তু অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন
এবং হেল্প এর বিপরীতে দেখেছি তাদের বেকুবীয় মানসিকতা নিয়ে আজাইরা লাফানী।
রাস্তার অবস্থা
আর কি কইতাম? এমপিগুলা খালী নিজের ধান্দায় বিজি। এই এলাকার এমপিদের দরকার
উত্তরাঞ্চলের এমপিদের দাশত্বের ডিউটি করানো। দল ক্ষমতায় টানা ৭ বছর চলে। তাই বলে
গৌরীপুর - কচুয়া, শাহরস্তি - হাজীগঞ্জ - চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ - রামগঞ্জ, রামগঞ্জ - লক্ষীপুর এর
রাস্তার এই অবস্থা?
লক্ষীপুর থেকে
বেগমগঞ্জ, মাইজদি পর্যন্ত শুধু রাস্তা ভালো।
কেউ কেউ বলবেন
রাস্তা তো ভালোই আছে। আমি তাদের বলি, হেটে আসুন,রিকশায় চলেন,সাইকেলেই চলেন,তারপর দেখেন। বাসে,প্রাইভেট কারে চলে পন্ডিতি করা লাগবেনা।
আর এই জায়গার
মানুষগুলারে হর্ন বা বেল টিপলেও কাজে আসেনা। রাস্তায় খাড়াইয়া পান চিবায়, লুংগি ঠিক করে, কাম কাজ সব সারে। আর লক্ষীপুররে তো রাস্তায় উপরে সুপারির আড়ৎ দিছে।
পুরা রাস্তায় জ্যাম দিয়ে ভরা। এক সুপারিওয়ালা সুপারির বস্তারে লাত্থি দিয়ে ফালাইয়া
দিছি রাস্তা থেকে। যাওয়ার জন্য জায়গা করে তারপর আসছি। হাইওয়ের উপর দোকান দিছে।
মানে এইখানে গাড়ি চলবেনা, দোকানদারি চলবে। অথচ তাদের
কারনে কয়েক কিঃমিঃ জ্যাম।
কয়েক টা যুবকের
খোঁচানো কথা ও শুনেছি। তারা মটরসাইকেলে যাচ্ছে আর আমাদের ভ্যাংগাইয়া গেলো। আর
জ্যামে যখন দেখলো তাদের আগেই আমরা চলে যাচ্ছি তখন বলে, কিরে তোরা আবার কোনাইত্তুন আইলি?
এই কথাডা আমার
কানে অনেক্ষন বাজছিলো। ওদের পরে আর পাইনাই। নাইলে উত্তর দিয়া দিতাম।
তাদের এই
ব্যাবহার কে কিভাবে নিবো তাই বুঝতে পারিনি।
মাইজদি যেয়ে
জিজ্ঞেস করলাম, ডিসি অফিস বা জেলা প্রশাসক এর কার্যালয় কোথায়? এতে তারা আকাশ থেকে পড়ছে। মানে তারা এটা চিনেইনা।
এক একজন কনফিউসে
পড়ে উল্টাপাল্টা রাস্তা দেখাইয়া দিছে। এক একজন থেকে এমন ভুল পথ দেখিতে পাইয়া এক
সময় মেজাজ বহু খারাপ হয়ে গেলো। এক পোলার উত্তর ও দিলাম, *াল ফেলাইতে নোয়াখাইল্লা হইছো??
ঘুরলাম কয়েকবার
একই রাস্তায়। আমার মুন্ডু ম্যাপ দেখলেই বুঝবেন (স্যাটেলাইট ভিউ) ।
জিজ্ঞেস করলাম, ঢাকা যাওয়ার বাস এখান থেকে কোথায় পাওয়া
যায় বা কাউন্টার কোথায়? এক একজন তো ঢাকা জীবিনে যায় ও নি
আর কাউন্টার কই থেকা দেখবো?
এভাবে আমরা
তিনজন বেশ ঝামেলায় পড়ছি কাল নোয়াখাইল্লাদের শহরে।
আমি এই নিয়ে ৩৪
জেলা শহর বেড়িয়ে এসেছি সাইকেলেই। এতোই তিক্ত অভিজ্ঞতা আর হয়নি। হাতের ৫ টা আঙ্গুল
সমান না, আমি ভালো করেই জানি। তবে আমার ভ্রমণের লিস্টে থাকা বাকি জেলা শহরেও তো
এমন মানুষ দেখিনাই। কাউকে কষ্ট দিলে সরি।
আর অনেক কিছুই
লিখার ছিলো, কিন্তু লিখলাম না। কারণ, কোন ভাবেই যদি এই
লেখা আমার শশুরবাড়ির কেউ দেইখা ফেলায় তাইলে তো পুরাই মাঠে মারা। আইমিন আমি শেষ।
তাই আগে আগেই লেখাটার সমাপ্ত করলাম।
আমার শাশুড়ি
কিন্তু মেইড বাই নোকিয়া, মানে নোয়াখাইল্লা।"
Thanks...
====>
Always feel free to SHARE so
that your friends can can know these informations. Keep
visiting this blog site for
more. U
also can submit your email to SUBSCRIBE
this blog.
Thanks
again. :)
No comments:
Post a Comment