রাতের বেলা ফেবুতে ঢুকেই তৃণা নামের
মেয়েটির ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পায় ফাহাদ। সে টুকটাক গল্প লিখে, তাই মেয়েদের এরকম রিকু পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুনা।
রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে তার প্রোফাইল ঘুরে আসলো। কিন্তু দেখার মত কিছুই পেলো না।
স্ট্রং প্রাইভেসি মারা। কয়েকটা নোট লিখা দেখলো বাট সেখানেও তালা মারা। এমন
প্রাইভেসি মারা মেয়ে কেন ওকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিলো কে জানে! তো ওকে অবাক করে
একটা মেসেজ দিলো সেই তৃণা মেয়েটি,
তৃণা- হাই...
ফাহাদ- জ্বী বলুন তালাকুমারী !
- what that means?
- ইয়ে মানে! আপনার সব কিছুতেই তো দেখি
তালা মারা, কিছু দেখাও যায় না পড়াও যায় না, তাই আর কি! :p :p
- ও হাহাহা। ভাল বলেছেন!
- তা আমাকে ফ্রেন্ড রিকু দিলেন যে!
- ভাব নেন নাকি? আপনাকে কি এড করা যাবেনা?
- না তা না! এমন তালাকুমারী দের
সাধারনত ফ্রেন্ডলিস্ট খুব ছোট থাকে আর ওরা অপরিচিত কাউকে ফ্রেন্ড রিকু দেয় না।
- হয়েছে! বুঝছি! আপনার ভাব বেড়ে গেছে।
এতই যখন প্রবলেম তাহলে দিলাম আনফ্রেন্ড করে...
- এই দাঁড়ান দাঁড়ান...একটু মজাও করতে
দিবেন না নাকি?
- আমি কারো মজার পাত্রী হতে চাইনা। :/
- আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে! মজা বন্ধ!
- :/ :/
- আপনার প্রোফাইল পিকেও দেখি তালা মেরে
রেখেছেন। টাচ করা যায় না। তবে ছবিতে যে মেয়েটাকে দেখছি তাকে দেখে আমার শুধু
মধ্যরাতের উজ্জ্বল চাঁদের কথা মনে পরে যাচ্ছে!!
- কি বলেন এসব! পাম দিচ্ছেন নাকি?
- না সত্যিই! চাঁদের কলংক আছে বলে সে
লজ্জায় ওই দুর আকাশে থাকে, তাকে টাচ করা যায়না
এজন্য! আপনার পিকটাও...
-who the hell are you? নিজেকে কি মনে করেন? এভাবে আমাকে অপমান করার মানে কি? যান দিলাম ব্লক করে। :@ :@ :@
অতঃপর সবুজ নামখানা ফাহাদের চোখের
সামনে কালো হয়ে গেলো! নাহ মেয়েটার সাথে একটু বেশিই ফান করা হয়ে গেছিল। ফাহাদ বুঝে
পায়না মেয়েদের এত ইগো কেন হয়! যাই হোক ফেবু বন্ধ করে লাইট অফ করে সে ঘুমাতে গেলো।
দুইদিন পর...
ফাহাদ ফেবুতে ঢুকে আবার
অবাক হয়ে যায়। কারন নোটিফিকেশন বারে দেখা যাচ্ছিল,
এক বছর পর...
ফাহাদ আজ ঢাকা এসেছে। উদ্দেশ্য তৃণার
সাথে দেখা করা। এই এক বছরে অনেক কিছু হয়ে গেছে ওদের ভেতর। ফাহাদ ফান করতে ভালোবাসে
আর তৃণা মুড দেখাতে। ফাহাদ কে যে কতবার ব্লক মেরেছে আর আনব্লক করেছে তা হয়তো তৃণা
নিজেও জানেনা। তবে তৃণার একটা গুন হলো ও খুব সুন্দর কবিতা লিখে। যা পড়ে ফাহাদ রীতিমত
টাশকি খায়। ও বুঝেনা এমন হেভিওয়েট টাইপের মেয়ে এত সুন্দর করে শব্দের বিন্যাস
কিভাবে ঘটায়! সে বুঝে যায় তৃণার মনের কোথাও নিশ্চিত একটা নরম, সুন্দর, সাজানো যায়গা আছে
যে যায়গাটার খোঁজ যে পাবে সে নিতান্তই ভাগ্যবান!
ফাহাদ এই এক বছরে সেই অংশটা আবিষ্কার
করার লক্ষ্যে ছিল। হয়তো সে পেরেছে বা হয়তো পারেনি। তা আজকেই বুঝা যাবে।
তো বেশ খানিকক্ষণ পর মেমসাহেবের
আগমন। তৃণা কে দেখে ফাহাদ আরও একবার অবাক হয়। এ যে একটা পরী টাইপের মেয়ে...
তৃণা- হাই! তুমিই তো ফাহাদ! দেখেই
চিনছি...আর যায়গা পাইলা না এই আনরোমান্টিক যায়গায় আমায় আসতে বললা!
ফাহাদ- আনরোমান্টিক যায়গাকেও
রোমান্টিক বানিয়ে ফেলার গুন ফাহাদের আছে মিস তালাকুমারী!
- দেখো আজকের দিনটা তে অন্তত আমাকে আর
ক্ষেপিয়ো না!
- এই তুমি একটু পিছনে ঘুরবা প্লিজ?
- মানে কি?
- আহা ঘুরোই না, তোমার পেছনটা দেখবো!
- আজিব তো! কি বলছো এসব? মাথা ঠিক আছে?
- হ্যা হইছে দেখলাম। আসলে তুমি আসলেই
পরী নাকি মানুষ তা শিওর হলাম। তোমার পেছনে কোন ডানা নাই দেখে খুশি হলাম!
- ওরে ফাজিল! আমায় আবার পাম দেয়া হচ্ছে
তাইনা?
- তুমি জানোই তো এই কাজ আমি খুব ভাল
পারি!
- নাহ! তুমি কেমন জানি! একবারও
সিরিয়াসলি আমার প্রশংসা করলা না! খালি পাম দাও আর আমায় ক্ষেপাও!
- আরে বাবা তুমি চাকা না আর আমি
পাম্পারও নই যে তোমায় পাম দিবো, আচ্ছা যাও
সিরিয়াসলি এবার তোমাকে একটা কথা বলি। তুমি ঠিক সুর্য্যের মত। যাকে ধরা যায়না, খালি চোখে যার দিকে তাকিয়ে থাকাও যায়না কিন্তু যার অস্তিত্ব
অনুভব করা যায় রোদে! এখানেও প্রাইভেসি!
- কিসের সাথে যে আমার তুলনা করো! আমি
আমিই...আমার সাথে কারো তুলনা করবা না।
- হুম আসলেই! তোমার মত তালাকুমারী এই
পৃথিবীতে আর নাই!
- আবার ওই পঁচা কথাটা বললা? থাকো তুমি এখানে বসে। গেলাম!
- এই এই তালাকুমারী... থুক্কু তালারাণী
ওহ সরি....তৃণা বেগম...ধুরর....এই প্লিজ শোন...যেও না....
কিন্তু কিসের কি! মুডি তৃণা একবার
যখন হাঁটা দিছে তখন আর তাকে ফেরত আনা যাবেনা। কল দিয়ে লাভ নাই তাই ফাহাদ ফেবুতে
ঢুকলো মেসেজ দেয়ার জন্য।
কিন্তু যে দুশ্চিন্তা করেছিল সেটাই
হলো। তৃণা তাকে ব্লক মারছে। মনে একরাশ হতাশা নিয়ে ফিরে আসলো সে।
এবার তিনদিন পর...
ফাহাদ দেখতে পেলো সেই
নোটিফিকেশন,
_____ছয় বছর পর,
ফাহাদ আর তৃণা বাসর ঘরের বিছানায়
শুয়ে আছে,
দুজনের হাতে দুটি মোবাইল। একজন
আরেকজনকে ফেবুতেই মেসেজ দিচ্ছে,
তৃণা- এই আমাকে তো বললা না লাল
শাড়িতে কেমন লাগছে!
ফাহাদ- আসলে এই অন্ধকারে তুমি কি
শাড়ি পরে আছো সেটা বুঝাই বড় দায় আর সেখানে তোমার বর্ননা দেই কেমনে?
- কেন? দিনের বেলা আমায় দেখো নি?
- ইয়ে মানে আসলে তোমার যেখানে বসে
থাকার কথা সেখানে এত্ত গুলা সুন্দরী ললনারা বসে ছিল যে আমি ঠিক বুঝিনি কার সাথে
আমার বিয়ে হচ্ছিল। তাই মাথা নিচু করে ছিলাম।
- কিহ? আবার ইয়ার্কি? তাও ভাল কারো দিকে
তাকিয়ে থাকোনি! তাকিয়ে থাকলে তোমার চোখের পাতায় টেপ মেরে দিতাম।
- হেহেহে...আমি ভদ্র ছেলে। যুবতী
মেয়েদের দিকে তাকাই না।
- এহ! আসছেন আমার ভদ্র বাবুটা! আজ
কিন্তু আর কোন রাগারাগি নয় আজ তোমার রোমান্টিকতা দেখবো।
- তাই? তালাকুমারীর প্রাইভেসি তাহলে আজ খুলবে?
- যাহ ফাজিল! আজ আমি রাগবো না যতই আমায়
ওই পঁচা নামে ডাকো...
- আচ্ছা আমি কেমন রোমান্টিক আজ তা
তোমায় দেখাবো! কাছে আসো!
- কাছে আসলে কি হবে?
- কাছে আসলে....
- হুম????
- তোমার চুল আঁচড়িয়ে দিবো.... আর তোমার
মাথার উকুন বেছে দিবো!!
- কিহ? ফাজিল, নচ্ছার, ছাগল, আনরোমান্টিক, তেলাপোকা!...... বলে কিনা আমার মাথার সিল্কি চুলে উকুন!
এক্ষুনি বিছানা থেকে নেমে যাও! যাও না হলে চিমটি দিয়ে নামাবো!
"দোহাই লাগে তোমার ওই দৈত্যাকার হাতের
নখ দিয়ে আমায় চিমটি মাইরো না। আমার বউ টারে বিধবা বানাইয়ো না" এই মেসেজ টা
সেন্ড করতে গিয়া দেখে মেসেজ যায় না। তৃণার নাম কালো হয়ে গেছে। অতঃপর বাসর রাতে আবার
ব্লক খেলো ফাহাদ।
অবশ্য দুই দিন পর রাতে ফাহাদ ফেবুতে
ঢুকেই আবার সেই নোটিফিকেশন পেলো,
...প্রায় এগারো মাস পর,
তৃণা মাথা নিচু করে ফাহাদ কে বললো,
- একটু ফেবুতে ঢুকো তো...
- কেন?
- একটা কথা বলার ছিল!
- মুখেই বলো তাহলে!
- না লজ্জা লাগে...
- ওরে বাবা মুডি মেয়েটা দেখি ইদানীং
লজ্জা পেতেও শিখেছে! তা লজ্জাটা কিসের...বলো!
- না ফেবুতে ঢুকো!
- আবার ব্লক মারছো নাকি?...
- ব্লক মারলে তোমায় যেচে দেখতে বলতাম
না ছাগল!
- :/ :/ :/
ফাহাদ ফেবুতে ঢুকে একটা নোটিফিকেশন
পায়। নোটিফিকেশন টার মর্ম বুঝতে কিছুক্ষন সময় লাগে ওর! বুঝার সাথে সাথে তৃণার
মুখের দিকে তাকায়। তৃণা সাথে সাথে লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে! ফাহাদ ইয়াহুউউউ বলে তৃণা
কে জড়িয়ে ধরে....পাশে পরে থাকে মোবাইলটা। সেটার স্ক্রিনে উঠে থাকে ফেসবুকের এক নোটিফিকেশন,
Thanks...
U can submit your email to SUBSCRIBE this
blog to get the posts regularly.
Thanks again. :)
No comments:
Post a Comment