যে দেশে মানুষ তিন
বেলা না, দুই বেলাই ঠিক মত খেতে পারে না সে দেশে ২৪ হাজার
টাকা দিয়ে এক হালি ইলিশ খাওয়া নিতান্তই ফ্যাসন ছাড়া আর কিছুই না। তুমি যখন ২৪
হাজার হালি দামের ইলিশ খাচ্চ তখন কি দেখচ যে তোমার পাশেই একটা টোকাই না খেয়ে বসে
আছে? অপেক্ষায় আছে তোমার ফেলে দেওয়া খাবারের জন্য?
লিখতে গিয়েই মনটা অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মনে পরে যাচ্ছে আজকের
ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা।
হাতিরঝীল এ যখন সাইক্লিং করতেছিলাম তখন
রামপুরা ব্রিজ এর দিকে প্রচণ্ড জ্যামে পরে যাই। কিচ্ছু করার নাই এমন জ্যাম।
পিঁপড়াও মনে হয় যেতে পারবে না এমন অবস্থা। সাইকেলে বসে বসে চারদিকের দৃশ্য
দেখতেছি। দেখলাম পাশেই এক তরমুজ ওয়ালা তরমুজ নিয়ে বসে আছে, তার
পাশেই এক কাপল তরমুজ খাচ্ছে। তাদের থেকে একটু দূরে দুইটা পিচ্চি দাঁড়িয়ে আছে হাত
ধরে। বড় ভাইয়ের হাত ধরে ছোট বোন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই কাপলের তরমুজ খাওয়া দেখছে আর
বড় ভাইকে গুতাচ্ছে। বেশ কয়েকবার ছোট বোনের সাথে দৃষ্টি আদানপ্রদানের পরে সাহস নিয়ে
সেই পিচ্চি টোকাই ভাইটি সেই কাপলের কাছে গিয়ে তার ছোট বোনকে দেখিয়ে একটু খানি
তরমুজ চাইলো। না, আমি কিছু শুনি নাই, কিন্তু তাদের কথোপকথন অনুমান করতে পাচ্চিলাম।
তো সেই কাপল দিল না তাদের একটুখানি তরমুজ।
আমিও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতেছি জ্যামের মদ্ধে যে শেষ পর্যন্ত কি হয়। ছেলেটিকে পাশে
দার করিয়ে রেখে তাঁরা তরমুজ খেয়েই যাচ্ছে। আমি অনুমান করেছিলাম হয়ত তরমুজের ছালের
দিকের কিছু অংশ তাঁরা বাচ্চাটিকে দিবে। কিন্তু না, হেসে
হেসে তাঁরা অনেকটুকু রেখেই ছেলেটির সামনেই ফেলে দিল নিচে। ছেলেটি তাদের মুখের দিকে
একবার তাকিয়ে নিচে মেনে গেল সেই ফেলে দেওয়া তরমুজের অংশটুকু তুলে আনতে। সেটা দেখে
সেই কাপল হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায় এমন অবস্থা। কাপলের ছেলেটি আগে ফেলেছিল, ছেলেটির ফেলে দেওয়া টুকরা তুলে আনার পরে ইচ্ছে করেই দেরি করে মেয়েটিও
সেভাবেই নিচে ফেলে দিল তার তরমুজ। টোকাই বাচ্চাটিও আবার সেটা তুলে আনতে যায়। সেটা
দেখে তাঁরা আবারো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।
দেখে মনে হচ্ছিল যে ছেলেটিকে বার বার উপরে
নিচে উথা নামা করাতে পেরে তাদের অনেক ভালো লাগতেছে।
এদিকে দুইটা টুকরাই হাতে পেয়ে টোকাই ছেলেটি আর
সেখানে না দাঁড়িয়ে তার বোনের কাছে চলে যায়, বস্তা
থেক পানির বোতল বের করে সেগুলো ধুয়ে তার ছোট বোনকে খেতে দেয়। ছোট বোন খেতে খেতে
পরম মমতায় তার ভাইকেও একটু খাইয়ে দেয়। ভাইটি না না করেও একটু খেয়ে ফেলে। এরকম যখন
দেখতেছিলাম, তখন আমার আর আমার বোনের কথা মনে পরে
যাচ্ছিলো। আমারও এরকম একটা ছোট বোন আছে, আমিও আমার ছোট
বোনের জন্য মাঝে মাঝে এটা ওটা কিনে নিয়ে যাই তার খাওয়া জন্য। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সে
খায় আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। মাঝে মাঝে আমাকেও জোর করে একটু আধটু খাইয়ে দেয়...
এটা ওটা বলে আমি না খাবার চেষ্টা করি, আবার মনে মনে চাই
যে আমাকে একটু জোর করে খাইয়ে দিক।
টোকাই বাচ্চা দুইটাকে দেখে আমাদের ভাই বোনের
এই ঘটনার কথা মনে পরে গেল। সাথে সাথেই সাইকেলে থেকে নেমে সাইকেল কাঁধে নিয়ে উঠে
যাই ফুটপাতের উপরে তরমুজ ওয়ালার কাছ থেকে পুরো একটা তরমুজ কিনে নেই। তারপর সেই
টোকাই ভাইবোনকে ডাকি। ডাক শুনে কেন জানি বাচ্চাদুইটা একটু ভয় পায়। আসবেনা আসবেনা
করেও চলে এল কাছে। তখন আমি তাদের হাতে তরমুজটা তুলে দিয়ে বললাম, এইটা
তোমাদের জন্য। খাও এটা। কাটতে পারবে নাকি তরমুজওলার কাছ থেকে কেটে নিব? বাচ্চা দুইটা একে অপরের চোখের দিকে তাকাচ্ছিল। তরমুজ ওলার কাছ থেকেই
কেটে নিলাম। তাদের হাতে ধরিয়ে দিলাম।
আমি তাকিয়ে আছি তাদের অবাক হওয়া চোখের দিকে।
আনন্দের ঝিলিক আমি দেখতে পাচ্ছি... এই জিনিসটা দেখার জন্নই অপেক্ষায় ছিলাম। আমি
চলে আসতেছিলাম সাইকেল নিয়ে, দেখি পিছন থেকে কে যেন সাইকেল টেনে ধরেছে,
ঘুরে দেখি পিচ্চি মেয়েটা। কিছু না বলে ড্যাবড্যাবে চোখে তাকিয়ে
আছে, চোখে অন্য রকম একটা ভালো লাগার দৃষ্টি। বাংলাদেশের
মানুষ এখনও কথায় থ্যাংকস দিতে শিখে নাই, তাঁরা চোখের
ভাষাতেই সব বলে দেয়। তখন পাশ থেকে ভাইটি বলে উঠে, “স্যার,
আপনেও এক টুকরা খান।”
তাদের এই কথায় কেন জানি অনেক ইমোশনাল হয়ে পরি, মাঝে
মাঝে কেন জানি অনেক ছোট ঘটনায়ও অনেক বেশি ইমোশনাল হয়ে পরি আমি। তাদের এই কথা শুনে
চোখে সাথে সাথেই কেন জানি পানি এসে যায় আমার, শুধু তাই না,
একেবারে টপটপ করে পরা শুরু করে। চোখে পোকা পরেছে এরকম ভান করে
চোখ মুছে ফেলি। সেটা দেখে ভাইটি আসে সাহায্যের জন্য। পানি এগিয়ে দেয় চোখ ধুয়ে
ফেলার জন্য। কি আর করার, তাদেরকে দেখিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলি।
আমি না না করা সত্ত্বেও তাঁরা আমাকে না খাইয়ে
ছাড়বে না। পিচ্চি মেয়েটা তখন এসে আমার হাত ধরে ফেলেছে। ওদিকে তরমুজওলাও বলতেছে, “স্যার,
খেয়ে যান এক টুকরা, এতো করে বলতেছে।”
তখন এক টুকরা খেলাম তাদের পাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আর আমরা যখন খাচ্ছিলাম তখন পাশেই
বসে ছিল কাপল যারা এদেরকে নিয়ে ফান করতেছিল। আমি যতক্ষণ সেখানে ছিলাম তাদের আর
হাসতে দেখি নাই। মনে হয় লজ্জা পেয়েছে অনেক। তবে তাদেরকে দেখানর জন্য বা লজ্জা
দেবার জন্য কিন্তু আমি এই কাজটা করি নাই। আমার বোনের কথা মনে পরে গেছিলো তখন এই
ভাইবোনের ভালবাসা দেখে। তারপর আর কি, সেখান থেকে চলে আসি
আমি, আসার সময় দেখলাম পিচ্চি দুইটা তরমুজওয়ালার কাছ থেকে
পলিথিন নিচ্ছে, বললাম যে, “এখানেই
সব খাবা তোমরা” তখন ভাইটা বলে উঠলো, “স্যার, মায়ের জ্বর,
বাড়িতে আছে, মায়ের জন্য এইট্টু নিলাম।”
আমি আর কি বলবো তখন বলেন...!!!!!!! L কিছুই
বলার ছিল না আমার। আর একটা কথাও না বলে সেখান থেকে চলে আসি চোখের পানি লুকিয়ে। L
আমি আজকে পান্তা খাই নাই, ইলিশ
খাই নাই। কিন্তু একটুকরো তরমুজ খেয়েছি। ...ভালবাসা মাখানো একটুকরো তরমুজ খেয়েছি
আমি... ইলিশ পান্তা খেতে না পেরে আমার কোন আফসোস নাই। আমি যে তরমুজ খেয়েছি সেটা
অমৃত সমান।
কত হাজার হাজার টাকা যে আজকে আমরা একেকজন অপচয়
করলাম এই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে। কিন্তু একটাবার কি এদের কথা বিবেচনা করে দেখেছেন...?
আর বেশি কিছু লিখতে ইচ্ছে করতেছে না আমার। L
আর বেশি কিছু লিখতে ইচ্ছে করতেছে না আমার। L
Thanks...
U can submit your email to SUBSCRIBE this
blog to get the posts regularly.
Thanks again. :)
আপনাকে ধন্যবাদ
ReplyDeleteআপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। দোয়া করবেন। :)
Delete