বিশ্বের বস্ত্র চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিনে
দিনে আমাদের দেশে অসংখ্য বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে
টেক্সটাইল
ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা। তাই পেশা হিসেবে
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা বস্ত্র প্রকৌশলী যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। শিল্প প্রতিষ্ঠানের
সবক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। সুতা থেকে পোশাক বানানোর প্রযুক্তিনির্ভর পুরো
প্রক্রিয়াটিই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়। যেকোনো আঁশ থেকে সুতা, বস্ত্র এবং রঙের মিশেলে
অধিকতর উপযোগী জিনিস বানানোর যে প্রযুক্তি, এক কথায় তা-ই হলো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং।
এই প্রজন্মের তেমনই কয়েকজন মেধাবী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন।
এ স এ ম আ জি জু র র হ মা ন
জেনারেল ম্যানেজার
অবনী টেক্সটাইলস লিমিটেড, ব্যাবিলন গ্রুপ
ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন চুপচাপ স্বভাবের। তবে কোনো জিনিস একবার মাথায় ঢুকলে সেটা তার মাথা থেকে তাড়ানো সম্ভব না। এমনকি ছোট্টবেলায় গ্রামে যখন খেলনা গাড়ি বানাতেন, সেটাও হওয়া চাই পারফেক্ট। আজ তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাবিলন গ্রুপের অবনী টেক্সটাইল লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার হিসেব কাজ করছেন। তিনি আজিজুর রহমান, এই প্রজন্মের মেধাবী একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার। তার হাত ধরে এই টেক্সটাইল মিলটি অনেক দূর এগিয়েছে। দেশের বাইরেও তাদের পণ্যের যথেষ্ট সুনাম। তার কিছু প্রমাণ আমাদের দেশেও রয়েছে। শীর্ষস্থানীয় ফ্যাশন হাউস ট্রেন্ডজ-এর পেছনের কারিগর তারা।
আজিজুর রহমানের বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প নিয়ে আলোচনায় অনেক কথা জানান। এই খাত ধীরে ধীরে আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি জানান, বিশ্বের বস্ত্র চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দিনে দিনে আমাদের দেশে অসংখ্য বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা। তাই পেশা হিসেবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বা বস্ত্র প্রকৌশলী যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। শিল্প প্রতিষ্ঠানের সবক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। সুতা থেকে পোশাক বানানোর প্রযুক্তিনির্ভর পুরো প্রক্রিয়াটিই ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়। যেকোনো আঁশ থেকে সুতা, বস্ত্র এবং রঙের মিশেলে অধিকতর উপযোগী জিনিস বানানোর যে প্রযুক্তি এক কথায় তা-ই হলো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং। এর চারটি পর্যায় রয়েছে—সুতা, কাপড় তৈরি, সুতা বা কাপড় রং করা এবং সবশেষে পোশাক তৈরি। এ চারটি পর্যায়কে আবার চারটি বিষয়ে ভাগ করা হয়েছে। যেমন ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং, ফেব্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং, ওয়েট প্রসেসিং এবং গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং টেকনোলজি। প্রযুক্তি যেখানে, প্রকৌশলীদের প্রয়োজনও সেখানে। আর এ জন্য দেশ, দেশের বাইরে অনেক জানাশোনার সুযোগ রয়েছে। কাজের প্রয়োজনে আজিজুর রহমান কোরিয়া, জার্মানি, চীন, ভারত, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, সুইজারল্যান্ডসহ অনেক দেশ সফর করে নতুন অনেক কিছু শিখেছেন।
আজিজুর রহমান নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, যেহেতু এখন অধিকাংশ বস্ত্রশিল্প কারখানায় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে, ফলে সেখানে প্রয়োজন হচ্ছে একজন বস্ত্র প্রকৌশলীর। নিট পোশাকের রফতানি বেড়ে গেছে ব্যাপক হারে। আর রফতানি নির্ভর করে মানসম্পন্ন উত্পাদনের ওপর। বস্ত্র প্রকৌশলীরা চাইলে ফ্যাশন জগতেও ভূমিকা রাখতে পারেন। দেশে বস্ত্র প্রকৌশলীদের অপ্রতুলতার কারণে এ পেশায় রয়েছে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। এ ছাড়া বস্ত্র প্রকৌশলীরা ইচ্ছা করলেই পুঁজি সংগ্রহ করে নিজ উদ্যোগে স্থাপন করতে পারেন টেক্সটাইল মিল। আর এ জন্য সব সময়ই আমাদের প্রযুক্তির সাথে আপডেট থাকতে হবে, সেটার প্রয়োগও থাকতে হবে বাস্তবে।'
আজিজুর রহমানের ছেলেবেলা কেটেছে চাঁদপুরে কিছুদিন। স্কুলে কেউ তাকে কোনোদিন এক থেকে দুই রোলে নামাতে পারেনি। ঢাকায় এসে কঠোর প্রতিযোগিতার মাঝেও তিনি প্রথম হতেন সব সময়। খুব ভালো ফলাফল করেই তিনি এসএসসি ও এইচএসসি উত্তীর্ণ হন। তারপর অনেক জায়গায় ভর্তির সুযোগ পেয়েও টেক্সটাইলে ভর্তি হন, আজ প্রমাণ হয়েছে তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নেননি। এখন কারিগরি বিষয়ের সাথে ফ্যাক্টরি চালানোর মতো বিশাল দায়িত্বটিও তার হাতে। সেটা দক্ষতার সাথেই করছেন তিনি। ঢাকায় লালমাটিয়াতে স্ত্রী নার্গিস আক্তার এবং দুই সন্তান আদনান রহমান ও সুমাইয়া রহমানকে নিয়েই কেটে যায় আজিজুর রহমানের সুখের সময়।
এসএম আজিজুর রহমান
ডাকনাম :আজিজ
মায়ের নাম :শামসুন্নাহার বেগম
বাবার নাম :এসএম সৈয়দ হোসেন
জন্মতারিখ ও স্থান :১ জানুয়ারি, চাঁদপুর
প্রিয় উক্তি :নিজের বিবেক, পরিবার ও দেশের প্রতি আন্তরিক হও, ভালোকিছু করার চেষ্টা কর।
প্রিয় পোশাক :শার্ট-প্যান্ট
প্রিয় মানুষ :আমার বাবা-মা
অবসর কাটে যেভাবে :ঘুরে, টিভি দেখে, ইন্টারনেটে তথ্য সংগ্রহে
সাফল্যের সংজ্ঞা :সততা ও কর্মনিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেলে সাফল্য আসবেই।
এ ম আ র জা মি ল
নির্বাহী পরিচালক (টেক্সটাইল)
আকিজ টেক্সটাইল মিলস্ লিমিটেড
তার এক আত্মীয়, আমিনুল ইসলাম অবসরপ্রাপ্ত মহা-ব্যবস্থাপক, বিটিএমসি (যাকে ছোটবেলায় হেলিকপ্টারে যাতায়াত করতে দেখেছেন, তখন অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে হেলিকপ্টার চালু ছিল); টেক্সটাইল জগতে তার কাজের অবদান ও সাফল্যই এমআর জামিলকে এই পেশায় শিক্ষা গ্রহণে অনুপ্রাণিত করে। পেশাগত জীবনের শুরুতে একটি ইনডেনটিং ফার্মে কাজ করার কারণে ও পারিবারিক উত্সাহে ছোটখাটো একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের পরিকল্পনা করলেও তখনকার পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় ওই স্বপ্ন বাদ দিতে হয়েছিল তাকে। চাকরি জীবনের ৯ মাসের মাথায় অনেকটা দ্বিধান্বিতভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিটিএমসি টঙ্গীস্থ মুন্নু টেক্সটাইল মিলে ১৯৮৫ সালের ২০ জানুয়ারি যোগ দেন। পরবর্তী পর্যায়ে বিটিএমসির প্রধান কার্যালয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগে মোট ১০ বছর সাফল্য এবং সুনামের সাথে কাজ করার পর ১৯৯৫ সালে এ্যাপেক্স গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। বিটিএমসিতে থাকাকালীন পরিকল্পনা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন বিভাগের কাজের অভিজ্ঞতা তাকে পরবর্তী জীবনে প্রাইভেট সেক্টরে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখতে সাহায্য করে। বাবার চাকরির স্বার্থে তার শৈশব কেটেছে দিনাজপুরে, কৈশোর কেটেছে রাজশাহীতে এবং শেষে এসে ঢাকায়—এভাবেই তার বেড়ে উঠা, এত কিছুর মাঝেও গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মাপাড়ের স্মৃতি তার নস্টালজিয়ায় টানে। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে এমআর জামিল মেজো। তিনি জানান, প্রকৃতপক্ষে জীবনের সবটাই আনন্দে পাড় করেছেন, যার জন্য এখন আর কোনো না-পাওয়ার আফসোস নেই তার। ছাত্রাবস্থায় মাকে হারিয়েছেন, এরপর বাবা বেঁচে ছিলেন বহুদিন। স্ত্রী নাসরিন রহমান এবং দুই মেয়ে ও এক ছেলে মুনমুন জামিল, রাইসা জামিল ও সামি ইবনে জামিলকে নিয়ে তার পারিবারিক আবহ।
তার কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে এমআর জামিল বলেন, 'আমি কাজ প্রিয় মানুষ। কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে ভালোবাসি। পরিবারের পিছনে খুব একটা সময় দিতে পারি না। তাই বলে বিচ্ছিন্ন মানুষ নই। শত ব্যস্ততার মাঝেও পরিবারের জন্য সময় খুঁজে নিতে হয়। আর নিজের কাজ সম্পর্কে বলতে গেলে এর পরিধি অনেক, তুলা থেকে শুরু করে ফিনিশড কাপড় উত্পাদন, মান বজায় রাখা, পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা, নতুন প্রকল্প এই সব নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। যেকোনো নতুন প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সৃজনশীলতার আনন্দ পাই।' সবশেষে তার ভবিষ্যত্ স্বপ্ন টেক্সটাইল শিল্পকে ঘিরেই। স্বপ্ন দেখেন এই শিল্পটি থাকবে উন্নতির শীর্ষে। তার ব্যক্তিগত আশা, আল্লাহ যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুস্থ শরীরে এই পেশায় অবদান রাখার সুযোগ দেন তাকে।
এমআর জামিল
ডাকনাম :টিপু
জন্মতারিখ ও স্থান :৬ জানুয়ারি, মাদারীপুর
মায়ের নাম :নুরজাহান বেগম (মরহুম)
বাবার নাম :আব্দুল হালিম শিকদার (মরহুম)
প্রথম স্কুল :পার্বতীপুর সরকার পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়
প্রিয় মানুষ :এএসএম শহীদ (প্রয়াত), বাংলাদেশের প্রখ্যাত টেক্সটাইল বুদ্ধিজীবী,
প্রিয় উক্তি :যেকোনো সাফল্য থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
অবসর কাটে যেভাবে :টিভি দেখে ও গান শুনে
সাফল্যের সংজ্ঞা :যথা সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সাফল্যের চাবিকাঠি।
সু মা য়ে ল মু হা ম্ম দ ম ল্লি ক
ভাইস প্রেসিডেন্ট, আনলিমা ইর্য়ান ডাইং লিমিটেড
১৯৯৫ সালে, এসকোয়ার নিট কম্পোজিট লিমিটেড, নারায়ণগঞ্জে উত্পাদন কর্মকতা হিসেবে যোগদান করেন। এসকোয়ার গ্রুপে ইর্য়ান ডাইং, নিটিং, নিট ডাইং, ফিনিশিং ও গামের্ন্টস থাকার কারণে অল্প দিনের মধ্যেই নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে সিনিয়র প্রোডাকশন অফিসার ও ডাইং ম্যানেজার হিসেবে পদোন্নতি পান। এভাবেই ক্রমে এগিয়ে গেছেন তিনি। ২০০৩ সালে অক্টোবর মাসে আনলিমা ইর্য়ান ডাইং লিমিটেডে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করেন সুমায়েল মুহাম্মদ মল্লিক। এখনও সেখানেই কর্মরত রয়েছেন।
সুমায়েল মুহাম্মদ মল্লিক মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি, সামাজিক অবস্থা ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট সবকিছুতেই ঐতিহাসিকভাবে বস্ত্রশিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে। সেই মসলিনের যুগ হতে বাংলাদেশ বস্ত্রশিল্পের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। বর্তমানে টেক্সটাইল সেক্টরে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের মেধা-শ্রমকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হয়। সামাজিক মর্যাদার দিক থেকেও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা প্রথম সারির। আর পারিশ্রমিকও অন্যান্য পেশার তুলানায় অনেক বেশি হওয়ার কারণে তাদের অর্থনৈতিক ভিতও অনেক মজবুত।
সুমায়েল মুহাম্মদ মল্লিক নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে বলেন, 'নতুন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রথমেই বৈরী পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয় না। সাজানো পরিবেশে কোনো চ্যালেঞ্জ ছাড়াই তাদের চাকরি জীবনের শুরু হয়। ফলে তারা একটি সুস্থির শিক্ষার পরিবেশ পায়। নতুন প্রজন্ম অনেক মেধাবী ও সুশৃঙ্খল। এ কারণে তাদের সাফল্যও কম নয় টেক্সটাইল সেক্টরে। নতুনদের অধিকাংশ বায়িং হাউসের মার্চেন্ডাইজার পদে কাজ করছেন। আগে এ পদে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও হংকংয়ের নাগরিকরা একচেটিয়া কাজ করত। সেই জায়গাগুলোতে নতুন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা কাজে এসেই সফলতা দেখাতে শুরু করেছে।' তিনি জোর দিয়ে বলেন, 'বিকাশমান বস্ত্রশিল্পের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের আরও চৌকস হতে হবে। লিড টাইম কমানো, উত্পাদন ব্যয় কমানো, উত্পাদনের গুণগত মানকে গ্রহণযোগ্য করা, যুত্সই প্রযুক্তির দক্ষ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, শ্রম ব্যবস্থাপনায় আধুনিক বিজ্ঞানের ব্যবহার, বাজার ব্যবস্থাপনায় সাফল্য লাভ করা ইত্যাদি বিষয়ে নতুন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা রাখা এখন সময়ের দাবি।' তাই এখানে কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে বলে জানালেন তিনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প হলো—তৈরি পোশাক খাত। বর্তমানে এ খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। এ শিল্প বিশ্ব বাজারে সুনাম অর্জনের পাশাপাশি সৃষ্টি করেছে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান। মোট কথা, বাংলাদেশের রপ্তানি শিল্পে এটি একটি সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বস্ত্র প্রকৌশল বিদ্যার উন্নতি। বিশ্ব বাজারে প্রকৌশল বিদ্যার কাতারে বস্ত্র প্রকৌশল বিদ্যা এখন একটি উজ্জ্বল নাম। সবশেষে সফল এই মানুষটির শৈশব নিয়ে জানতে চেয়েছিলাম, তিনিই শোনালেন তার গল্প, 'আমার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ঢাকার মণিপুরী পাড়ায়। ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি কলেজ থেকে এইচএসসি ও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তেজগাঁও থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছি। বাবা আবু সাঈদ মল্লিক মত্স্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের উর্ধ্বতন কমকর্তা আর মা ডাক্তার।'
সুমায়েল মুহাম্মদ মল্লিকের স্ত্রী রুমানা আক্তার পিপলস ইউনিভার্সিটির সিনিয়ার লেকচারার। তাদের দুটি সন্তান। বড়জন ক্লাস থ্রিতে, ছোটজনের বয়স তিন বছর। এই নিয়েই তার সুখের সংসার। এর বাইরে বই মেলাতেও বেরিয়েছে তার বই 'দূর আকাশে, দূর মৃত্তিকায়'। দায়িত্বের পাশাপাশি বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, আইইবি-এর টেক্সটাইল ডিভিশনের সেক্রেটারি তিনি।
সুমায়েল মুহাম্মদ মল্লিক
ডাকনাম :সুমায়েল
জন্মতারিখ ও স্থান :২০ অক্টোবর, জয়পুরহাট
মায়ের নাম :ডা. সুরাইয়া বেগম
বাবার নাম :আবু সাঈদ মল্লিক
প্রথম স্কুল :ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাইস্কুল
প্রিয় মানুষ :বাবা-মা
প্রিয় উক্তি :নিজে সত্ হোন, অন্যকেও সত্ হতে বলুন।
প্রিয় পোশাক :শার্ট, প্যান্ট
সাফল্যের সংজ্ঞা :সততা, মেধা ও দক্ষতা—এই তিনের সমন্বয়ে সফলতা আসবেই।
রু বে ল আ ক্তা র সো হা গ
অপারেশন ম্যানেজারস, মার্ক-আপ গ্রুপ
নাসার বিজ্ঞানীরা যারা দীর্ঘদিন যাবত মহাকাশে মানুষ পাঠাতে কাজ করে যাচ্ছেন, তারা অসংখ্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের গবেষণায় নিযুক্ত করেছেন স্পেস স্যুট এবং ন্যানোফাইবার, কার্বন ফাইবারের শিল্ড তৈরির জন্য। অতি সম্প্রতি বুয়েট নন-ওভেন জুট টেকনোলজিকে জিও-টেক্সটাইল হিসেবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কাজে ব্যবহার শুরু করেছে। আগামীতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়মিত বিষয় হিসেবে যখন জিও-টেক্সটাইল পড়ানো হবে তখন এই কোর্সের জন্য বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদেরই শিক্ষক হিসেবে পাবে তারা। এমনই বাস্তবতা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের, জানালেন রুবেল আক্তার সোহাগ। বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক শেষ করে কাজ করছেন মার্ক-আপ গ্রুপে।
সোহাগ বলেন, 'শতকরা ৮০ভাগ লোকই জানেন না যে, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি মানে কাপড়-চোপড়ের ইঞ্জিনিয়ারিং না। এটি সম্পূর্ণ ম্যানুফ্যাকচারিং বেজড একটি প্রসেস যেখানে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে মেশিন সেটাপ থেকে শুরু করে প্রসেস কন্ট্রোল, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, গিয়ার মেকানিজম এবং মেইন্টেনেন্স নিয়ে কাজ করতে হয়। স্পিনিংয়ের ইঞ্জিনিয়ারদের প্রোগ্রাম ইনপুট দেওয়া জানতে হয়। ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রথম সারির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়। সব মিলিয়ে দায়িত্বপূর্ণ কাজ করতে হয় তাদেরকে। একটা ফ্যাক্টরি নির্ভর করে তাদের উপর।'
টেক্সটাইলের বর্তমান হালচাল জানতে চাইলে সোহাগ বলেন, 'বিশ্বের বিভিন্ন নামি-দামি ব্র্যান্ডের পোশাকের জোগান দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনীর সদস্যদের সামরিক পোশাক।। ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) একটি কারখানার দুটি ইউনিটে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের পোশাক তৈরি হলেও তা সাধারণের জানার বাইরেই রয়ে যায়। ব্রিটিশ ও বেলজিয়ামের বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত এ কারখানায় ন্যাটো ও মার্কিন বাহিনী ছাড়াও ব্রিটিশ পুলিশ এবং ইউরোপের বেশ কিছু দেশের সেনাবাহিনীর পোশাক তৈরি হয়। এগুলো নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য অনেক গর্বের বিষয়।'
সোহাগ আরও বলেন, 'টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি দুটি ক্ষেত্রেই রয়েছে চাকরির বিশাল ক্ষেত্র। সরকারি বিভিন্ন টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপিত টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজের রয়েছে অবারিত সুযোগ। সেই সাথে গার্মেন্টস শিল্পেও টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বায়িং অফিসে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে কাজ করে চলেছেন। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে উত্পাদন কার্যক্রমের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে হয় তাদের। মূলত একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারকে যেকোনো ছোট-বড় টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির পণ্য উত্পাদন কার্যক্রমের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।' সোহাগ এর সাথে যোগ করেন, 'টেক্সটাইল শিল্পে দক্ষ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের অপ্রতুলতার কারণে শিক্ষা জীবনের শেষ বর্ষে অধ্যয়নরতদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে থাকলেও এ ক্ষেত্রে একজন ছাত্র-ছাত্রীর শিক্ষাজীবনে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়ে না। কেননা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই বিষয়ক যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই তারা এই বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখে।' সোহাগের ছেলেবেলা কেটেছে যশোরের ক্ষেত্রপালায় চিত্রাপাড়ের এক গ্রামে। খুব দুষ্টু ছিলেন সে সময়। এখনও গ্রামে গেলে সবার সাথে আড্ডা দিতে খুব ভালোবাসেন।
রুবেল আক্তার
ডাকনাম :সোহাগ
জন্মতারিখ ও স্থান :১৭ অক্টোবর, যশোর
মায়ের নাম :আনোয়ারা বেগম
বাবার নাম :লাল মিয়া সরদার
প্রথম স্কুল :ক্ষেত্রপালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
প্রিয় উক্তি :হেরে যাব বলে তো স্বপ্ন দেখিনি।
প্রিয় পোশাক :জিন্স, টি-শার্ট
প্রিয় মানুষ :আমার বাবা-মা
সাফল্যের সংজ্ঞা :পরিশ্রম।
লিখেছেনঃ রিয়াদ খন্দকার ও সাজেদুল ইসলাম শুভ্র
Thanks...
<> ♦♣♠ ♠♣♦ <>
U can submit your email to SUBSCRIBE this
blog to get the posts regularly.
Thanks again. :)
__________________________-___________________________
__________________________-___________________________
awesome, really inspiring.
ReplyDeletethanks...
Deletereally it's inspiring. :)