মাওয়া ঘাটে... |
বেশ কিছু দিন ধরে কেন জেন মনের মদ্ধে একটা জিনিস খুব ঘুরতেছিল। এরকম যে পদ্মা নদীর
পাড়ে বসে পদ্মার ইলিশ খাবো। ব্যাপারটা মাথার মদ্ধে এরকম করে চেপে গেছিল যে এটাকে
কোন মতেই নামাতে পারতেছিলাম না। শেষ মেশ অনেক চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করেছিলাম যে
আমি জাবই যাব। এন্ডোমন্ডো তে অনেক খেটেখুটে মেইন রোড এভোইড করে একেবারে গ্রামের
মদ্ধ দিয়ে একটা রুট বানিয়ে রেখেছিলাম অনেক আগেই। তারপর গতকাল রাতেই হুত করে ঠিক
করে ফেলি যে
আজকে যাব। এবং গেলামও... :D
আজকে যাব। এবং গেলামও... :D
বসিলা ব্রিজে... |
গতকাল রাতেই সব ঠিক করে রেখেছি।
নিজের সান গ্লাস টা কয়েকদিন আগে ভেঙ্গে গেছে বলে ধার নিয়ে আসলাম। স্যালাইন নিলাম,
বোতলে পানি নিলাম, কি কি গান শুনবো সব মোবাইল এ নিলাম, ম্যাপ কাগজে একে নিলাম,
কোথায় কোথায় রেস্ট নিব সেটাও ঠিক করে নিলাম, লাইট এ চার্জ দিলাম। তারপর রাতে
ঘুমাতে গেলাম প্রায় ২ টার সময়।
হ্যান্ডেল বার থেকে দেখা কুয়াশা... |
যেখানে আমার দুই তিনটা অ্যালার্ম
এও ঘুম ভাঙ্গে সেখানেআজকে মাত্র একটা অ্যালার্মএই ঘুম ভেঙ্গে গেছিল। ঠিক ৭টার সময়ে
ঘুম থেকে উঠে ৭.১০ এ আমার যাত্রা শুরু করি। প্রথম বাধা পেলাম একটু দূর গিয়ে, দেখি
সাইকেলের পিছনের চাকায় বাতাস কম, দমে গেলাম না। যাবোই যাব ভাব নিয়ে চললাম। কারন এত
সকালে কোন দোকান খোলা নাই। অবশেষে সংসদ ভবনের সামনে আমাদের বিডিসাইক্লিস্ট এর
মেম্বারদের দেখা পেলাম, তারা বাইক ফ্রাইডে এর জন্য জরো হচ্ছে। সেখানে থেমে একজনের
কাছে চেয়ে নিয়ে পাম করে নিলাম। তারপর শুরু হল ছুটে চলা।
ধলেশ্বরী নদীর ব্রিজে... |
মোহাম্মদপুর বসিলা ব্রিজ হয়ে
আটিবাজার, সেখান থেকে জয়নগর, তারপর হিজলা, রামেরকান্দা, রুহিতপুর।
রুহিতপুর পার হয়ে একটা অবাক করা জিনিস দেখলাম। আমি আসলে এতোটা অবাক হয়েছি যে বলার
মতো না। রাস্তায় চলতে চলতে হথাত খেয়াল করলাম যে কেন জানি অন্ধকার অন্ধকার লাগতেছে।
তারপর সানগ্লাস খুলে টের পেলাম ব্যাপারটা। দেখি চারদিক কুয়াশায় ভরপুর। প্রথমে
বিশ্বাস না করলেও নিজের হাতের দিকে চেয়ে টের পেলাম যে আসলেই কুয়াশা। পিক দিলাম
একটা দেখেন...
ইছামতী নদীর ব্রিজে... |
কে বিশ্বাস করবে এই গরমের দিনে কুয়াশা। আর কুয়াশা এতই
তীব্র ছিল যে সব গাড়ী লাইট জালিয়ে চলাচল করতেছিল। শেষে আমিও আমার হেড লাইট আর টেইল
লাইট জালিয়ে গেছি।
রুহিতপুর এর পড়ে পেলাম পোরাহাটি, তারপর ধলেশ্বরী নদী,
সেখানে একটু থেমে একটু ফোটোশুট করলাম, তারপর পেলাম ইছামতী নদী, সেখানেও একটু থেমে
ফোটোশুট। তারপর বরাইখালি বাজারের কাছে গিয়ে সাইকেলেই নাস্তা সেরে নিলাম, কিছু না
জাস্ট কলা আর হানিকম্ব। :D
কুয়াশা এর অবস্থা দেখেন... |
এরপরে একটা অফরোড পাই। ১ কিমি. এর মতো। তারপর বরাইখালি
বাজার থেকে ঢাকা-মাওয়া মেইন রোড এর আগ পর্যন্ত এত সুন্দর একটা রাস্তা পেলাম যে কি
বলব... অনেক সুন্দর একটা রাস্তা পেলাম। এত সুন্দর যে কি বলব। অনেক দিন এরকম
গ্রাম্য সুন্দর রাস্তা দেখি নাই বলেই মনে হয় একটু বেশিই সুন্দর মনে হচ্ছিল। বিশেষ করে রাস্তার টার্ন গুলা তো সেই রকমের
ছিল। J এত সুন্দর ব্যাংকিং করা ছিল যে শুধু মনে হচ্ছিল যে আরও
জোরে গিয়ে সুন্দর করে টার্ন নেই। :D
আরও একটি অসাম ব্রিজ... |
এরকম সময়ে হুট করে একটা গাড়ী আমাকে ক্রস করে গিয়ে ব্রেক
করে আমার সামনে। বেশ ভয় পেয়ে যাই। কারন চারদিক ফাকা। বের হয়ে এল দুইজন বিদেশি।
আমাকে থামালো। বিদেশি দেখে থেমেছিলাম নিশ্চিন্তে। কারন বিদেশীরা আর যাই করুক,
আমাদের দেশে এসে কখনো ছিন্তাই করার অপচেষ্টা করবে না।
কথা বলে জানতে পারলাম আমাদের বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে এসেছে।
জার্মানি থেকে এসেছে। শুনে কেন জানি গর্বে বুকটা একটু ফুলে গেছিল। কারন তখন টি-শার্ট
টাকে কেন জানি চিপা চিপা লাগতেছিল। :D
কুয়াশাচ্ছন্ন রাস্তা... |
আমি কথা থেকে এসেছি কোথায় জাচ্ছি কেন জাচ্ছি সব জিজ্ঞেস
করলো। বললাম সব। শুনে তো দেখি তাস্কি খেয়ে
গেল। বলল, ইলিশ কি ঢাকায় পাওয়া যায় না?
আমি বললাম, ঢাকায় তো পাওয়া যায়, কিন্তু আমি আসলে
চাচ্ছিলাম একেবারে পদ্মার পাড়ে বসে পদ্মার ধেউ দেখতে দেখতে পদ্মার ইলিশ খাবো। :D
আমার এই কথা মনে হয় তাদের অনেক ভালো লেগেছিল।
আরও একটি সুন্দর ব্রিজ... |
অনেক ভালো লেগেছে এই বিদেশী টুরিস্টদের
সাথে দেখা হয়ে।
খাওয়া শেষ করে গিয়ে আবার সেই চার জনের সাথে মিলিত হয়ে ঝালমুড়ি খেলাম।
অনেক অনেক অনেক সুন্দর একটি কাঠের ব্রিজ এর উপরে আমার সাইকেল... |
আরেকটা বেইলি ব্রিজ... |
ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক... |
এরপরে ধাকা-মাওয়া হাই ওয়ে তে উঠে দিলাম এক টান... :D ধিরে ধিরে সোলাপুর, বেজগাও,
শ্রীনগর ফেরি ঘাট, শামসপুর। এই পুরা রাস্তাও অনেক সুন্দর দেখতে। শুধু একটাই ভয়
লাগতেছিল, যখন বাস গুলান ক্রস করে যাচ্ছিলো তখন একটা করে হাওয়ার ঝাঁপটা দিয়ে
যাচ্ছিলো। J
সেই নতুন দেখা হওয়া ৪ জন সাইক্লিস্ট |
এরপরে দোগাছি এর কাছে এসে দেখি ৪ জনের এক সাইক্লিস্ট
গ্রুপ, হাই দিয়ে কথা বলে জানলাম যে তারাও নাকি আমার মতোই মাওয়া যাবে। অবাক হলাম
এটা শুনে যে তারা নাকি মহাম্মাদপুর থেকে আসতেছে...!!!!
পরে তাদের সাথে কথা বলে জানলাম যে তারা নাকি বের হয়েছে
সেই ৬ টায়, আমি ৭.১৫ তে। তবুও আমি তাদের নাগাল ধরে ফেলেছি। :p তখন এভারেজ স্পিড
দেখলাম যে প্রায় ২২.৫ কেএমপিএইচ এর মতো। :D
ঝালমুড়ি খাবার সময় |
তারপর পউছিলাম সেই কাঙ্ক্ষিত
মাওয়া ঘাটে। সেই চারজনের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে আগে ইলিশ খেলাম। একেবারে পদ্মার
পাড়ে বসে। হোটেলের জানালা দিয়ে পদ্মার ঢেউ দেখা যাচ্ছিলো। :D
খাওয়া শেষ করে গিয়ে আবার সেই চার জনের সাথে মিলিত হয়ে ঝালমুড়ি খেলাম।
পদ্মার পাড়ে... |
তারপর আবারো
ফেরি ঘাটে গিয়ে একটু ফটো সেশন করে ফেরার রাস্তা ধরলাম।
আসার সময় মাথার উপরে বিচরণ
করতেছিল গনগনে সূর্য, সেই তাপ মাথায় নিয়ে আসার সময় দুইজন বার বার পিছনে পরে
যাচ্ছিলো এটা দেখে অপর দুজনের প্ররোচনায় চলে আসি।
আসার সময়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের দৃশ্য। |
আসার সময়ে অবশ্য একটা এক্সিডেন্ট
হয়েছিল আমার। এই রাইডের প্রথম ও একমাত্র এক্সিডেন্ট। :D
একটা স্পিড ব্রেকার দেখি নাই। সে সময়ে স্পিড ছিল প্রায় ২৫ কিমি. এর মতো করে আর এক হাতে সাইকেল ধরে ছিলাম।
একটা স্পিড ব্রেকার দেখি নাই। সে সময়ে স্পিড ছিল প্রায় ২৫ কিমি. এর মতো করে আর এক হাতে সাইকেল ধরে ছিলাম।
ফলে যা হবার তাই হল। আমাকে সহ লাফিয়ে উঠার ফলে রিফ্লেক্স
বসত হ্যান্দেল ঘুরিয়ে ফেলি। ফলাফল পপাত ধরণীতল। খুব একটা আঘাত আমি পাই নাই। হাতুর
কাছে একটু আঘাত লেগেছিল, আর পেটে। কাটা ছেরা বা ব্লিডিং হয় নাই। কিন্তু আমার
সাইকেলের সাম্নের চাকা টাল হয়ে গেছেগা। L এ ছাড়া আর কিছু
হয় নাই... এতাই ভালো জিনিস।
বাচ্চা দুইটা অনেক ক্লান্ত বলে বিশ্রাম |
আসার সময়ে আমার সাথের দুজন অনেক
প্রব্লেম করতেছিল। তারা কখনো এরকম লং রাইদে যায় নাই ফলে ক্লান্তিতে বারবার থেমে
যাচ্ছিলো। অবশেষে ধিরে সুস্থে এসে আমাদের রাইড শেষ করলাম বসিলা ব্রিজ এর কাছে।
এরপরে আমি নিজের মতো করে চলে আসি।
আসার সময় ইছামতী ব্রিজের উপরে। |
এই দুজনের কারনে আমার এভারেজ
স্পিড কমে গেছে। যেখানে প্রায় ২৩ কিমি. এর মতো ছিল সেটা হয়ে গেছে । আসার সময়ে বার
বার এই ছেলেদুটি আমাকে জিজ্ঞেস করতেছিল, “ভাইয়া, আপনি এত স্ট্যামিনা পান
ক্যাম্নে...?” আমি কিছু না বলে হেসে দিচ্ছিলাম। J
অবশেষে সাকসেসফুলি শেষ হল আমার
মাওয়া জার্নি। এবং আমার পদ্মার পাড়ে বসে পদ্মার ইলিশ খাওয়ার ইচ্ছা। :D
পদ্মার তীরে আমার সাইকেল। |
পিএসঃ এক্সিডেন্ট এর সময়ে বুঝি
নাই যে কি পরিমান ব্যথা পাইছি, আসার সময়েও বুঝি নাই। কিন্তু রাতে যখন এই পোস্ট টা
লিখতেছি তখন টের পেলাম কি রকম ব্যথা। দুইটা পেইন কিলার খেয়েও কাজ হচ্ছে না। হাটতে
পারতেছি না পায়ের ব্যথায়, আর ডান কাত হয়ে শুতেই পারতেছিনা। L
_______________________________
_______________________________
Ride description:
Total Distance: 114.19 KM
Duration: 5h 19m 28s
Average speed: 21.4 KMpH
Top speed: 32.7 KMpH
Carolies: 2247
Hydration: 6.77 L
Min altitude: -16 m
Max
altitude: 28 m
Total ascent: 266 m
Total
descent: 309 m
Speed lap: 26m 10s (for 10 KM)
2m 22s (for 1 KM)
যে কোন ফটোতে ক্লিক করে ফেসবুক এর এ্যালবাম এ যেতে পারেন ভালো ভিউ এর জন্য।
আগে থাকতে তৈরি করে রাখা এন্ডোমন্ডো এর রুট এর লিঙ্কঃ ইলিশ খাওয়া জন্য Mawa Ghat with a ♥ on the top of the route.
আর সাইক্লিং করে করা রুট এর লিঙ্কঃ রাইড লিঙ্ক
congrats man...uve got guts...carry on...
ReplyDeleteyeah. love cycling a lot. :)
Deletethanks :)